ব্যাটিং স্বর্গে রানে ফেরার আনন্দ
সফরটি এখনও দূরের স্মৃতি হয়নি। এই তো মাস দেড়েক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে ব্যাটিংয়ে কী নাজেহাল অবস্থাই না পার করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টেও সেটার পুনরাবৃত্তি। পোর্ট এলিজাবেথের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও নিকষ কালো অন্ধকারে পতিত হয় বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ইনিংস শেষ ৮০ রানেই।
দুই টেস্টের প্রথম ইনিংসও যে বলার মতো ছিল, তেমন নয়। তাই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পরও মন খারাপের যাতনা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তখন থেকেই ব্যাটিং নামক ভাঙা ঘরের ছিদ্র বন্ধ করা নিয়ে কাজ শুরু। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগেই যেন কঠিন এই কাজ শেষ করা যায়, এর জন্য তাড়ার শেষ ছিল না বাংলাদেশের।
সেই তাড়া শেষ হয়েছে, লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। শুরুটা টস হারে, এরপর নাঈম হাসান, সাকিব আল হাসানের দারুণ বোলিংয়ে লঙ্কানদের ৩৯৭ রানে আটকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা। দ্বিতীয় দিনের কিছুটা সময় পার করে তৃতীয় দিনটা পুরোটা বাংলাদেশের। ৩ উইকেটে ৩১৮ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। দুই সিরিজের মাঝে যেন আকাশ-পাতাল তফাৎ। বাংলাদেশ শিবিরে তাই রানে ফেরার আনন্দ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে উদ্বোধনী জুটি থেকেই আনন্দের শুরু। এতোদিন যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে বাংলাদেশের হতাশার শেষ ছিল না, সেই জুটির ব্যাট থেকেই ছড়ালো প্রশান্তির পরশ। তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ১৬২ রানের জুটি গড়েছেন দশম সেঞ্চুরি করে আঙুলের চোটে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়া তামিম ইকবাল। যে জুটি বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো 'স্পেশাল'। টেস্টে পাঁচ বছর ও ৬১ ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটি থেকে ১০০ বা তার চেয়ে বেশি রান পেল বাংলাদেশ।
জয়ের বিদায়ে ভাঙে জুটি, এর আগে ৫৮ রান করেন তিনি। জয়ের বিদায়ের পর অবশ্য ছন্দ জারিয়েছে বাংলাদেশ। দ্রুত ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। এরপর আবারও ছন্দময় ব্যাটিং। যদিও তামিম চালিয়ে যেতে পারেননি, আঙুলের চোটে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়া বাংলাদেশ ওপেনার অপরাজিত আছেন ১৩৩ রান। দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেওয়া মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস গড়েছেন ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। মুশফিক ৫৩ ও লিটন ৫৪ রানে অপরাজিত।
তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৭৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ, তবে হাতে আরও ৭ উইকেট। রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়া তামিম তো আছেনই, দারুণ জুটি গড়া মুশফিক-লিটনের কাছেও আরও বড় আশা করতে পারে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ব্যাট হাতে ঠিক রাস্তা খুঁজে পাওয়ার আনন্দে বাংলাদেশ শিবির। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের ভাষায়, 'তামিম ও জয় দারুণ ব্যাটিং করেছে। ইনিংস উদ্বোধন করা সহজ কাজ নয়। আজ ব্যাটিংয়ে যে শৃঙ্খলা ছিল, এটাই চেয়েছিলাম আমরা।'
তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ আরও বললেন, 'আমার মনে হয় দলের সব ক্রিকেটার তাদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউট হই আমরা, বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। এরপর তাদের ভালো বোলিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়। গত দুই সপ্তাহে তাদের নিয়ে আমাকে বেশি কাজ করতে হয়নি। ছোট ছোট কাজ ও টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য শৃঙ্খলা ব্যাপারে কথা হয়েছে আমাদের। তারা এখন পর্যন্ত সেটা করে দেখিয়েছে।'
বাংলাদেশের রানে ফেরার মিশনে জহুর আহমেদের উইকেটেরও অবশ্য অবদান আছে। এই উইকেটে পেসার বা স্পিনারদের জন্য তেমন কিছুই নেই, যা দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলবেন বোলাররা। ম্যাচ শুরুর আগেই লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে জানিয়েছিলেন, এই উইকেটে রান বন্যা হবে। বোলারদের জন্য কিছুই নেই এখানে। তিনদিন খেলা হওয়ার পর সিডন্সও সেটাই বললেন, 'উইকেট এখনও ভালো। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। উইকেটে স্পিনারদের জন্য টার্ন নেই, আবার পেসারদের জন্য বাউন্সও নেই।'