আবারো উর্ধ্বমুখী রডের বাজার, দুই দিনে টনে বেড়েছে দুই হাজার টাকা
প্রায় দুই মাস নিম্মমুখী থাকার পর আবারো বাড়তে শুরু করেছে নির্মাণপণ্য এম এস রডের বাজার। গত দুই দিনে দেশের কারখানাগুলোতে প্রতিটন রডের দাম দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
লোহাজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রিত শুল্কারোপের ঘোষণায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য এই খাতের ব্যবসায়ীদের।
কেআর স্টিলের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, কাঁচামাল সংকটে রডের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে প্রায় দুই মাস পণ্যটির বাজার স্থবির ছিল। ওই সময় পণ্যটির দাম টনপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কমে যায়।
আসন্ন বাজেটে লোহাজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রিত শুল্কারোপের ঘোষণার পর থেকে পণ্যটির বাজার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যটির চাহিদা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।
ইস্পাত কারখানাগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, গত দুই দিনে ইস্পাতের বাজারে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ টিএমটি) রডের দাম।
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতিটন ৭৫ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায়। যা দুই দিন আগে ৮২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের (টিএমটি) এমএস রড বিএসআরএম ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, কেএসআরএম ৮৬ হাজার টাকা, একেএস ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ও জিপিএইচ ৮৩ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
টনে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে বৃহস্পতিবার অটো মিলের ৬০ গ্রেডের এমএস রডের মধ্যে গোল্ডেন ৮২ হাজার ৫০০ টাকা, এসএএসএম ৮১ হাজার টাকা, বায়েজিদ ৮২ হাজার টাকা, এইচএম স্টিল ৮৩ হাজার টাকা এবং কেআর ৮০ দরে বিক্রি হয়েছে।
গত দুই দিনে সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের রডের দামও ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে শীতলপুর স্টিলের সেমি অটো এম এস রড প্রতিটন ৭৮ হাজার টাকা, বিএম, আল ছাফা, রাইজিং, খলিল, বলাকা, আম্বিয়া, পেনিনসুলা ও মানতি স্টিলের রড ৭৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা দুই দিন আগেও ৭৫-৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ইস্পাতের পাশাপাশি ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেইট ও স্ক্র্যাপের দামও টনে ২-৪ হাজার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিটন স্ক্র্যাপ ৫৮ হাজার টাকা, প্লেট ৬৭ হাজার টাকা এবং বিলেট ৭২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগে স্ক্র্যাপ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্লেট ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিলেট ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারি রড ব্যবসায়ী মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, "অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে রডের বিক্রি কমে গেছে। গত দুই মাস থেকে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কিছুটা কমিয়ে আনলে পণ্যটির বিক্রি কিছুটা বৃদ্ধি পায়।"
তবে গত দুই দিন ধরে পণ্যটির বাজার আবারো টনে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের বাজার আবারো স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যেসব শিপ ব্রেকিং কোম্পানি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করেছে তাদের আগের চেয়ে অনেক টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও প্লেটের দাম বেড়ে গেছে। ফলে নির্মাণ পণ্যটির দাম আবারো উধ্বমুখী হয়েছে।
তাছাড়া আগামী বাজেটে লোহাজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রিত শুল্কারোপের ঘোষণায় বাজার কিছুটা উর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই শিল্পদ্যোক্তা।
তবে এই কারখানা মালিক বলেন, রডের বাজার কিছুটা বাড়লেও এই বর্ধিত বাজার দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়ে গত দেড় বছরে রডের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে।
এতে পণ্যটির চাহিদা কমে আগের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। ফলে পণ্যটির দাম আরো বেশি অস্থির হওয়ার সুযোগ নেই।