বিরাশির বিপ্লব যেভাবে হারিয়ে গেল
বিরাশি সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে দেন এরশাদ। প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসাবে দেশ শাসন করতে থাকেন। তার আগের বছরের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন। জিয়াউর রহমানও ক্ষমতা করায়ত্ত করেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে হটিয়ে। সেটা ১৯৭৭ সাল। তার দুই বছর আগে ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর দফায় দফায় ক্ষমতার পালাবদল ঘটে।
সবমিলিয়ে ১৯৮২ সালকে একটা জটিল সময়ই ধরা যায়। বলা চলে সময় তখন প্রগতির বিপক্ষেই ছিল । তেমন সময়ে মানে এরশাদের ক্ষমতা দখলের তিন মাসের মাথায় নতুন একটি পত্রিকার আত্মপ্রকাশ সহজ কথা ছিল না। অন্তত যদি তা প্রগতি, মুক্তবুদ্ধি বা মুক্তচিন্তার পক্ষের হয়। ঢাকার সার্কিট হাউজ রোডের প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) লাইব্রেরির পেছন দিকের এক তাকে হঠাৎই নজরে পড়ল পত্রিকাটি। নামটাই টানল বেশি- সাপ্তাহিক বিপ্লব।
প্রথম সংখ্যা বেড়িয়েছিল ১৯৮২ সালের ২৪ জুন। সম্পাদক সিকদার আমিনুল হক (১৯৪২-২০০৩)। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত কবি, প্রগতির পক্ষের লোক, আলোকসন্ধানী আধুনিক এক মানুষ। তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয় ২০২০ সালে। পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন একেএম মাঈদুল ইসলাম। ন্যাশনালিস্ট পাবলিকেশন্স লিমিটেডের পক্ষে বেগম মরিয়ম ৫ সেগুনবাগিচা থেকে এটি প্রকাশ করতেন।
প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদে ছিলেন ক্যামেলিয়া মুস্তফা। তিনি আবৃত্তিশিল্পী ছিলেন মূলত। প্রচ্ছদকাহিনীর শিরোনাম ছিল 'দৈনিক জাতীয় অপচয় তিন কোটি টাকা'। আরেকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছিল যার শিরোনাম, অবিন্যস্ত কাঁচাবাজার। কবি শহীদ কাদরি একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন যার শিরোনাম ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিমানেরা। শামসুর রাহমানের কবিতা ছিল, আব্দুল মান্নান সৈয়দ লিখেছিলেন গল্প। শিল্প- সাহিত্য সংবাদও ছিল আনেক।
সূচিপত্রের পরের পাতাটির নাম প্রিয় সম্পাদক। সেখানে ছিল সমসাময়িক বিষয়ে লেখা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো ৪টি চিঠি। একটি চিঠির শিরোনাম, সো হোয়াট। ঢাকার হাসিনা আজাদ চিঠিটি লিখেছেন বিদ্রুপের ঢঙে। বলছেন, শাহবাগের ফোয়ারায় কালেভদ্রে পানি উঠতে দেখা যায়।… ফোয়ারা থাকতেই হবে এমন কি কথা আছে। যদি সেই ফোয়ারাই হয় পানিবিহীন ফোয়ারা। জাতীয় নাট্যশালা নেই, প্ল্যানেটরিয়াম নেই, টিউব ট্রেন নেই, পানি বিহীন ফোয়ারাও না হয় এই ঢাকায় থাকবে না। সো হোয়াট?
আরেকটি চিঠি কুষ্টিয়া থেকে পাঠিয়েছেন সাজিয়া মুনিম। এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও তাঁর পুত্রবধূর মেনকা গান্ধির দ্বন্দ্ব নিয়ে। সাজিয়া মতামত রাখছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে আবেগ প্রাধান্য দিলে চলে না, মেনকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সে কথাটিই প্রমাণ করলেন ইন্দিরা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়ে ভারতের অমুসলিম ঐতিহাসিকেরা যে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন সেটিও আবেগনির্ভর। এবার তা বন্ধ হবে কি? পরের পাতায় আরেকটি চিঠিতে ঢাকার খালেদা হাকিম লিখছেন, টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে পটুয়া কামরুল হাসান যে লুঙ্গি দিয়ে ফতুয়া বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তা ভাবনার দাবী রাখে, এতে সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাকটি কেনার সুযোগ হবে। পরের চিঠিটি ময়মনসিংহের মনিভূষণ দত্তের। তিনি ওস্তাদ ফুলঝুরি খানের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, যোগ্য সম্মান পেলেন না এই গুনী শিল্পী।
পরের পেইজের টাইটেল সপ্তাহ
আগের সপ্তাহে ঘটে যাওয়া দেশি-বিদেশি ঘটনা নিয়েই 'সপ্তাহ'। এ বিভাগে সউদী বাদশাহ খালেদের মৃত্যুই বড় ঘটনা। এরশাদের ছবি ছাপিয়ে বলা হয়েছে, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সউদী বাদশার শোকে মুহ্যমান, একইসঙ্গে কিং ফাহাদের অভিষেকে আনন্দিতও। হ্যান্ডআউট নামের একটি বিভাগ সপ্তাহের অন্তর্ভুক্ত ছিল । সামরিক আইন প্রশাসক যেসকল সামরিক আদেশ জারি করেছেন সেগুলোই ওই বিভাগে স্থান পেয়েছে। এমন একটি আদেশ জারি করা হয় ২৩ এপ্রিল, সেটি ছিল ২২ নং সামরিক আদেশ। তাতে বাস ও ট্রেনের ছাদে এবং ঝুলে যাতায়াত করা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
শিক্ষাঙ্গন শাখায় আরেকটি হ্যান্ডআউটের বিষয় ছিল, বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের ছেলেমেয়েদের জন্য মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের কোটা বিলোপের সিদ্ধান্ত। সপ্তাহের আরেকটি খবর ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮১ সালের বিএ ও সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ সম্পর্কিত। তাতে লেখা হয়, বিএ পাশ পরীক্ষায় পাশের হার ৩৪ ভাগ। ১১ হাজার ৩৯ জনের মধ্যে তিন হাজার ৭শ ৩৮ জন পাশ করেছে। কেউ প্রথম বিভাগ পাননি। চারশ ৪২ জন দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে আর বাদবাকী সকলে তৃতীয় বিভাগ। দুর্ঘটনাও একটি বিভাগের নাম। বলা হচ্ছে, গত ৬ জুন গুলশান ১ নং মার্কেটের কাছে মো. হাশমত আলী নামের এক ডিমবেপারী দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। দুবৃত্তরা তাঁর কাছ থেকে ৬০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।
আন্তর্জাতিক বিভাগে বলা হচ্ছে, ফকল্যান্ড নিয়ে দীর্ঘ ৭৩ দিনের সংঘাত শেষ হলো। মঙ্গলবারে আর্জেন্টিনা বাহিনীর ১১ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পন করেছে। বিপ্লবের সম্পাদনা পরিষদ ফকল্যান্ড নিয়ে ইংল্যানড ও আর্জেন্টিনার সংকটকে সাদামাটাভাবে দেখেনি। তারা বরং দ্বীপগুলো আর্জেন্টিনার ভাগে থাকার ব্যাপারেই একমত কারণ আর্জেন্টিনা থেকে সেগুলোর দূরত্ব মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার।
এরপর সাপ্তাহিক বিপ্লব একটু লেজার টাইম দিল পাঠকদের পুরো পাতার কার্টুন ছেপে। তাতে এক বাচ্চাকে তার চাচ্চুকে বলতে দেখা যাচ্ছে যে, পিচ্চিকাপে চা খাও কেন? বিশ্বকাপে খাইতে পারো না...। উল্লেখ্য ১৯৮২ সালে বসেছিল ফুটবল বিশ্বকাপের ১২তম আসর (১৩ জুন থেকে ১১ জুলাই), যা অনুষ্ঠিত হয় স্পেনে।
অপচয় ৩ কোটি টাকা দৈনিক
এরপর প্রচ্ছদকাহিনী। দৈনিক জাতীয় অপচয় ৩ কোটি টাকা শিরোনামের প্রচ্ছদকাহিনী লিখেছেন জগলুল আলম। বেশ খেটেখুটে লেখা গবেষণাধর্মী সে প্রতিবেদন। যেখানে ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরের বাজেট ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, সেখানে দৈনিক ৩ কোটি টাকা অপচয় একটি বড় সংখ্যাই বটে। প্রতিবেদক শ্রমঘণ্টা, পানি ও বিদ্যুৎ, বিলাসিতা এবং যোগাযোগ অব্যবস্থাজনিত অপচয়ের হিসাব তুলে ধরেছেন এখানে। তিনি জানাচ্ছেন, মোট ৫ লাখ ৭৮ হাজার সরকারি কর্মচারীর বেতন ও সুবিধাবাবদ খরচ হয় ১৫০০ কোটি টাকা বছরে। আরো জানাচ্ছেন, ৫১টি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে বছরে জ্বালানী তেল বাবদ খরচ হয় ৬ কোটি টাকার বেশি। ফাইল চালনায় কর্মচারীরা কচ্ছপের গতিতে চলেন অথচ ওভারটাইম বাবদ গুনতে হয় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
অপচয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলছেন সরকারি চাকরি বেশি প্রার্থনা করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তারা চাকরি পাওয়ার পরই উচ্চবিত্তের ন্যায় জীবন যাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাই অপচয় করাকে তারা অভ্যাসে পরিণত করে। এরপর প্রতিবেদক অপচয়ের ধরণ হিসাব করে দেখাচ্ছেন- সরকারি পর্যায়ে দৈনিক মোট শ্রমঘণ্টা ৩৫ লক্ষ। মাসে ৮ কোটি ৭৫ লক্ষ, বছরে ১০৫ কোটি শ্রমঘণ্টা। প্রতিজন যদি ৩০ মিনিট করেও দিনে অপচয় করেন তবে ৪০ লক্ষ টাকা অপচয় হয় । এদিকে গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। অথচ সরকারি অফিসগুলোতে শুধু শুধু বাতি জ্বলতে ও পাখা ঘুরতে দেখা যায়।
প্রতিবেদক উল্লেখ করছেন সারাদেশে সাড়ে কোটি লোকের মাত্র ৮ ভাগ শহরবাসী। অথচ তারাই বেশি সুবিধা পায় আর অপচয়ও করে বেশি। যেমন একজন লোকের বছরে ৮ গজ কাপড় দরকার অথচ উচ্চবিত্তের একজন মানুষ বছরে ২০ গজ কাপড় ব্যবহার করে। প্রতিবেদক ধূমপানে সংযত হওয়ার, নতুন নয় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার এবং সাজসজ্জা সামগ্রীতেও সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রচ্ছদকাহিনীর পর ছাপা হয়েছে প্রবাসীর পত্র। তাতে নিকট পড়শী ব্যাংকক এবং চেরী ফুলের দেশ জাপান শির্ষক দুটি পত্র ছাপা হয়েছে। জাপানের পত্রলেখক জানাচ্ছেন, বিদেশিদের জন্য জাপানে চাকরির দরজা বন্ধ, জাপানিরা ইংরেজি বলতে চায় না এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ান এমন অধ্যাপকও ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলেন, তবে ট্যুরিস্টদের খুব খাতির করে জাপানিরা।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিমানেরা নিবন্ধে শহীদ কাদরী স্বীকৃতির জন্য বিদেশিদের মুখ চেয়ে থাকার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইউরোপ –আমেরিকার পাঠক-শ্রোতার প্রশংসা কাম্য তবে তার জন্য হত্যে দেওয়াটা রুচিকর নয়। বিজ্ঞানে সত্যেন বোসের যে অবদান তা কি কারুর স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে কিংবা জয়নুল আবেদীনের চিত্রকলার প্রশংসা কেউ করতে না পারলে ধরতে হবে সেটা তার বুদ্ধিহীনতা।
বিচিত্র বিশ্ব
মূলত বিশ্বের অন্যরকম সব খবর নিয়েই বিপ্লবের বিভাগ বিচিত্র। একটা খবর যেমন আমেরিকায় যুদ্ধ বিরোধী মিছিল। খবরে বলা হচ্ছে, সারা আমেরিকা এখন তুমুল স্লোগানে মুখর-অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করো, মানবজাতিকে বাচাও, অস্ত্রের পেছনে অপচয় চলবে না। মিছিলে নরকরোটির মুখোশ পরা অংশগ্রহণকারীর ছবি ছাপিয়েছে বিপ্লব। আরেকটি খবর হলো, প্লেগার্লের হাতে প্লেবয়। তাতে বলা হচ্ছে, অবশেষে প্লেবয়-সাম্রাজ্যের দন্ডমুন্ডের কর্তা হলো প্লেবয় প্রতিষ্ঠাতা ইউ হেফনারের ২৯ বছরের মেয়ে ক্রিস্টি হেফনার। যদিও প্লেবয়ের সে সুদিন আর নেই তবু একেবারে হতদ্দশা বলা যাবে না।
বেআইনী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে লন্ডনের ক্যাসিনো বিক্রি করে দিতে হয়েছে প্লেবয়কে কিন্তু প্রকাশনা তো বন্ধ হয়নি, শরীর দেখিয়ে পয়সা কামানোর সুযোগও বহাল আছে আগের মতোই। বিচিত্র বিভাগ শেষ শুরু হলো অপরিকল্পিত বাজার: বিপর্যস্ত শহরবাসী শীর্ষক প্রতিবেদন।
এ থেকে জানা যাচ্ছে, কারওয়ানবাজার, রামপুরা বাজার, মালিবাগ বাজার, নাখালপাড়া বাজার, শান্তিনগর বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার যাচ্ছে পৌর কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে; ডিআইটির পরিচালনায় থাকছে নয়াবাজার, গুলশান ১ ও ২ নং আর মোহাম্মদপুর বাজার আছে হাউজিং অ্যান্ড সেটেলম্যান্ট বিভাগের দায়িত্বে। মালিকানা বিরোধে আছে মৌলভীবাজার, রায়সাহেব বাজার ও কমলাপুর। প্রতিবেদকের মূল কথা, সব বাজারের অভিন্ন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই ভোগান্তি বাড়ছে।
এবং ইত্যাদি
সাহিত্য সংবাদে প্রথম খবর কবি সৈয়দ আলী আহসানের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে কবিকণ্ঠের স্থানীয় এক হোটেলে সংবর্ধনা সভার আয়োজন । অনুষ্ঠানে অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক ছিলেন সভাপতি। প্রবন্ধ পড়েছেন ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ, কবি আল মাহমুদ এবং মান্নান সৈয়দ। আলোচক ছিলেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, তালিম হোসেন প্রমুখ। কবিকণ্ঠের সম্পাদক ফজল শাহাবুদ্দিন স্বাগত ভাষণ দেন।
মানপত্র পাঠ করেছেন ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। পরের খবর- ১৬ মে শিশু একাডেমী মিলনায়তনে শিশু সাহিত্য পরিষদ আয়োজন করে 'দর্শনীর বিনিময়ে ছড়া' অনুষ্ঠানের। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আতোয়ার রহমান, আবদার রশীদ, আখা মুসলেহউদ্দিন, আসাদ চৌধুরী, সিকদার আমিনুল হক প্রমুখ এতে ছড়া পাঠ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা ছাপা হয়েছে পৃষ্ঠাব্যাপী। যেমন ৪ জুনে শফিক রেহমানের ম্যাগাজিন সোনার হরিণ নিয়ে বলা হচ্ছে এটি কখনোই আকৃষ্ট করার মতো অনুষ্ঠান ছিল না, এবারেরটিও তথৈবচ। ৬ জুন সকালের নতুন কুড়ি অনুষ্ঠান নিয়ে বলা হয়েছে, এর মান কমে গেছে।
এছাড়া রোববারের নাটকে ছিল মমতাজউদ্দিন আহমেদের আমার যত ভালোবাসা। সাধারণত মমতাজউদ্দিন আহমেদ ভালো নাটক উপহার দেন কিন্তু এবারের নাটকটি পাতে নেওয়ার মতো ছিল না। ১০ জুনের যদি কিছু মনে না করেন ম্যাগাজিনের ফজলে লোহানীকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তাড়াতাড়ি এটিকে গুটিয়ে নিতে। কারণ এটি গতানুগতিক ভাড়ামিতে পূর্ণ।
তারকালোকের তিন কুমারী কন্যা লেখাটি ববিতা, জুলিয়া, কাজরী নিয়ে। বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা, কেন তারা বিয়ে করছেন না, কবে নাগাদ করবেন, বিয়ে সংক্রান্ত গুঞ্জন-গুজব লেখাটির বিষয়। ঢাকায় ফরাসী চলচ্চিত্র উৎসব শিরোনামের আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া গেল এরপর। আঁলিয়স ফ্রসেজ ও মধুমিতা হলে দুটি ভিন্ন ভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমটিতে ছিল জা ককতোর রেট্রোস্পেক্টিভ। পরেরটিতে দেখানো হয়েছে মলিয়ের, দি পার্টনার, ফাস্র্ট ট্রিপ, লুক অ্যালাইক, সাচ আ লাভলি ভিলেজের মতো ছবি। দুটি উৎসবই ছিল সপ্তাহব্যাপী। তারপর ছাপা হয়েছে বিশ্বকাপ '৮২ এর ফিকশ্চার।
শুভ সংবাদ দিয়ে শেষ
বিপ্লবের প্রথম সংখ্যা শেষ হয়েছে কিছু শুভ সংবাদ দিয়ে যেমন ঢাকায় আরো ৫টি গভীর নলকূপ, বেবিফুড সরবরাহে নতুন পদ্ধতি, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর সাজা, মস্কো ওয়াশিংটন অস্ত্র হ্রাসে আলোচনায় বসবে, ১ হাজার ৭শ ৪২ প্রকার ওষুধ নিষিদ্ধ, বাংলাদেশ ৭৭ জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইত্যাদি।
৬৪ পাতার পত্রিকাটিকে সময়ের হিসাবে সাহসীই মনে হলো। কখনো কখনো মনে হলো অগ্রসর। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, বিনোদন ইত্যাদি অনেক কিছুই ছিল এক মোড়কে। কতদিন টিকে ছিল জানা যায়নি। আমরা অবশ্য বিরাশি সালের সেপ্টেম্বর মাসের দুটি সংখ্যার প্রচ্ছদও পেয়েছিলাম। কিন্তু তার পরের কথা জানতে পারিনি। তবে পত্রিকাটি যে সময়ের দর্পন হয়ে উঠেছিল তা বেশ বোঝা গেল।