এনবিআর নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্য উঠে যাচ্ছে প্রায় ৫০ আমদানি পণ্যে
আমদানি পণ্যের মূল্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে 'মিনিমাম ভ্যালু' বা ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা রয়েছে, এমন প্রায় ৫০ পণ্যের ওপর সরকার নির্ধারিত মূল্য উঠে যাচ্ছে।
এর ফলে আমদানিকৃত ওইসব পণ্যের প্রকৃত মূল্যের ওপর শুল্কায়নের সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। বাজেটে এ ধরনের প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাগ, জুতাসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্য রয়েছে এ তালিকায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী ফাইন্যান্স বিলের মাধ্যমে ওইসব পণ্যের মিনিমাম ভ্যালু বা ট্যারিফ ভ্যালু তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারেন।
বর্তমানে প্রায় সোয়া তিনশ আমদানি পণ্যের ওপর মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণ করা রয়েছে। সূত্র জানায়, ধীরে ধীরে সব পণ্যের ওপর থেকে এই ভ্যালু তুলে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) এর নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো দেশ আমদানি পণ্যের ওপর এভাবে মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে না। ডব্লিওটিও'র নীতিমালা মানা এবং বাণিজ্যকে আরও সহজ করার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় গাড়ি প্রস্তুতকারী শিল্প আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। তবে এর মূল কম্পোনেন্ট গাড়ির বডি ও পেইন্টিং সেকশন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়ার অংশ হিসেবে, আলোচ্য সময়ের পর থেকে কোনো শিল্প ওই দুটি কম্পোনেন্ট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে না পারলে তাদের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে।
পোলট্রি ও ডেইরি খাতে বিনিয়োগ সহজ করতে যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমতে পারে, সহজ হতে পারে কাঁচামাল আমদানিও। ফেব্রিকের পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে পেপার বিক্রির ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ ভ্যাট কমে ২ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া, আমদানি পর্যায়ে অ্যাডভান্স ট্যাক্স (এটি) কমানো কিংবা প্রত্যাহারে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক দাবি থাকলেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া বেশকিছু পণ্যে বসছে সম্পূরক কর।
আমদানি পণ্যের মিনিমাম ভ্যালু তুলে দেওয়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মনজুর আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যে মূল্যে বিক্রি হয়, তার ভিত্তিতেই শুল্কায়ন হওয়া উচিত। বিদ্যমান মিনিমাম ভ্যালু কিছু ক্ষেত্রে বেশি আবার কিছু ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে কম ধরা আছে। এটি প্রকৃত দামের চিত্র দেখায় না।
"এটি তুলে দিয়ে এনবিআরের স্ট্যাচুটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) ৫৭ এর আওতায় ভ্যালুয়েশন করা উচিত। ওই আদেশটি ডব্লিওটিও'র নীতিমালা অনুসরণ করে তৈরি করা। তাতে বলা আছে, কোনো পণ্যের গত তিন মাসের আমদানি মূল্যের মধ্যে সবচেয়ে কম দামটি বিবেচনায় নিয়ে শুল্কায়ন করতে হবে। কিন্তু ওই এসআরও অনুযায়ী পণ্যের শুল্কায়ন হচ্ছে না", যোগ করেন তিনি।
বর্তমানে সোয়া তিনশ পণ্যর কোনোটিতে কেজি বা মেট্রিক টন বা ইউনিট হিসাব করে আন্তর্জাতিক বাজারে যাই দর হোক না কেনো, মিনিমাম হিসেবে ধরে দেওয়া ওই মূল্যের ওপর প্রযোজ্য হারে শুল্ক নির্ধারণ হয়। তবে মিনিমাম মূল্য হলেও কাস্টমস অফিসাররা চাইলে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় তা বেশি দামও ধরে শুল্কায়ন করতে পারেন। কিন্তু ওই পণ্যের আমদানি মিনিমাম ভ্যালুর নিচে হলেও তা ওই মূল্যে শুল্কায়ন করা যাবে না।
গত দুই মাস আগে বজেট আলোচনায় আমদানিকারকরা জানান, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য যেমন বাড়তে পারে, কমতেও পারে। কিন্তু মূল্য কমলে শুল্ক কর্মকর্তারা তা বিবেচনায় নেন না। তারা বাজারমূল্যের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়ন করার দাবি জানান।
অবশ্য মিনিমাম ভ্যালু উঠে গেলে মিস ডিক্লারেশনের বা ভুল ঘোষণার মাধ্যমে কাস্টমস কর ফাঁকির প্রবণতা বাড়ে কিনা, সে সন্দেহও রয়েছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে।
এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মিনিমাম ভ্যালু তুলে দিলে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। একই পণ্য একেক কাস্টমস হাউজ একেক মূল্যে ভ্যালুয়েশন করতে পারে। এটি অসৎ উদ্দেশ্যেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সূত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে আমদানি পণ্যে যে মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণ করা আছে, তার প্রায় সবগুলোই বাজার মূল্যের চেয়ে কম।
এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের অপর কর্মকর্তা বলেন, ফাঁকির সুযোগ কমে যাবে। কেনোনা এনবিআরের বিশেষ সফটওয়্যার 'অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ড সিস্টেম'-এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য জানার সুযোগ রয়েছে।