ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধিতে ঐতিহাসিক উচ্চ ভর্তুকির পরিকল্পনা বাজেটে
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ২০২২-২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তারপরও এটি যথেষ্ট না-ও হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্য পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর পরিমাণ আরও ১৫-২০ শতাংশ বাড়াতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) আন্তর্জাতিক বাজারে সার ও এলএনজি গ্যাসের বাড়তি দাম ভোক্তাদের উপর না চাপিয়ে ভর্তুকির পরিমাণ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৪% বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এই ভর্তুকির মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ, এলএনজি ও কৃষিখাতে ব্যয় হবে ৪৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি।
অর্থাৎ, সরকারকে আগামী অর্থবছর জুড়ে মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশ ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ব্যয় করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন যে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়লেও- তা সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ কোনো 'এক্সিট প্ল্যান' না থাকায় ভর্তুকি চাপ দিন দিন বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই বছরের মে মাসে জ্বালানির দাম বেড়েছে ৬৫%, ইউরিয়া সারের দাম ১১৪% এবং এলএনজির দাম বার্ষিক ১,২০০% বেড়েছে।
ইতোমধ্যে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
কৌশলগত এ দুটি পণ্য ছাড়াও, জ্বালানি তেল ও সারের দাম পর্যায়ক্রমে ও স্বল্প আকারে বাড়িয়ে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে এসব খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে, তা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
অর্থাৎ, সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার ও তেলের দাম বাড়ালেও ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১১৩ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও- দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়নি সরকার। আবার প্রস্তাবিত বাজেটেও জ্বালানি তেলে ভর্তুকিতে কোন অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়নি।
২০১৬ সাল থেকে সরকার জ্বালানি তেলের ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে। সরকার বর্তমানে লোকসানে জ্বালানি তেল বিক্রি করলেও গত কয়েক বছর বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করেছে।
বর্তমানে প্রতিদিন জ্বালানি তেলে সরকারের লোকসান হচ্ছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আমানত রয়েছে ৩১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।