করোনার প্রভাব পড়েনি আমদানি-রপ্তানিতে
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৩ মার্চ থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার। পরবর্তী নির্দেশনা না আসলে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ফলে ওই দিন থেকেই বাংলাদেশি নাগরিকরা ব্যবসা, ভ্রমণ ও চিকিৎসাসহ অন্য কোনো কাজে ভারতে যেতে পারছেন না। তবে এর প্রভাব পড়েনি দু'দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে; আমদানি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য। যা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। রোববার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৩৫ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে; আমদানি হয়েছে ৩৮০ ট্রাক। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এখনও বেনাপোলে ঢোকার অপেক্ষায় পেট্রাপোলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার গাড়ি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের মতো স্বাভাবিক রয়েছে দেশের অন্য সকল স্থলবন্দর। তবে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ভারত থেকে আসা ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায় পণ্য আমদানিতে সময় কিছুটা বেশি লাগছে। তবে তার প্রভাব পড়ছে না আমদানি কার্যক্রমে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে এলসি করতে হয়। এ কারণে করোনা ভাইরাসের প্রভাব এ বন্দরে এখনও পড়েনি। তবে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে কিছুদিন পরেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে দেশের সকল সীমান্ত হাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সীমান্ত হাট সংশ্লিষ্ট উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা।
হিলি বন্দরে পড়েনি করোনার প্রভাব
দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরে করোনাভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়েনি। গত দশ দিন আগেও হিলি স্থল বন্দর দিয়ে যে পরিমান ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করতো, বর্তমানে সে পরিমাণ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা এখনও চলমান রয়েছে।
তবে সমস্যায় পড়েছেন ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা ব্যবসায়ীরা। করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের পণ্য দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন নৌ-বন্দছে পড়ে রয়েছে। পুঁজি আটকে থেকে তারা ব্যবসায়ীকভাবে লোকসানের শিকার হচ্ছেন।
দিনাজপুর জেলার আমদানিকারক শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, করোনা আতঙ্কে আন্তর্জাতিক বাজার ফল্ট করেছে। জাহাজ দেরি করে আসছে। গত পরশু দিন একটি জাহাজে করে আমার কিছু পণ্য এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। ওই পণ্যগুলো আসার কথা ছিল ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু সেগুলো এসেছে প্রায় ২৫ দিন পরে।
তামাবিলে ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আমদানি কার্যক্রমে বিলম্ব
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে স্বাভাবিক রয়েছে আমদানি কার্যক্রম। এই বন্দর দিয়ে মূলত কয়লা ও পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন এই বন্দও দিয়ে ২০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। তবে ভারতীয় ট্রাক চালকদের শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য ট্রাকের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি করছে। ফলে আমদানি হওয়া ট্রাকের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আগে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক পণ্য এ বন্দও দিয়ে প্রবেশ করলেও এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ১৭০ ট্রাক প্রবেশ করছে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে বন্দরভেদে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, কুড়িগ্রামের বালিয়ামারী ও সুনামগঞ্জের ডলুড়া সীমান্ত হাট বন্ধ রয়েছে। ফলে সীমান্ত হাট সংশ্লিষ্ট দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন।