নওগাঁয় ট্রাকের চাপায় ৪ শিক্ষকসহ নিহত ৫, আহত ১
নওগাঁয় ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন শিক্ষকসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরেক শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন।
আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের নওগাঁ সদর উপজেলা বলিহার ইউনিয়নের বাবলাতলা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের স্বজনরা জানান, জেলার নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে একটি অটোরিকশায় করে তারা নওগাঁর এক মাদ্রাসায় সৃজনশীল প্রশ্ন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। সকাল ৮টার দিকে বাবলাতলা মোড়ের উত্তরদিকে পাশের রাস্তা থেকে একটি মাটিবাহী ট্রাক্টর বাবলাতলা মোড়ে ওঠার চেষ্টা করছিল।
এ সময় নওগাঁ থেকে পশুখাদ্য বোঝাই একটি ট্রাক রাজশাহীর দিকে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ওই ট্রাক্টরকে পাশ কাটছিল। ট্রাক্টরটিকে মহাসড়কে উঠতে দেখে অটোরিকশাটি তার ডান পাশে চাপিয়ে দেয়। এরপর দ্রুতগতির ট্রাকটি অটোরিকশাটিকে চাপা দিয়ে টান দিলে রাস্তার পাশে পুকুরের পানিতে উল্টে পড়ে যায়।
এতে অটোরিকশার যাত্রী পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে চারজন এবং অটোরিকশা চালকসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত শিক্ষক আগে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাকে রামেকে নেওয়া হয়। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় দুই ঘটনার চেষ্টার পর মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানী আজিজুল ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক আতাউর রহমান বলেন, পার্শ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর মৌজায় একটি সাইলো নির্মাণ হবে। সেখানে নিচু জায়গা ভরাট করার জন্য বেশি কিছু দিন থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটি বহনের ট্রাক্টরটি বাবলাতলা মোড়ের পাশের রাস্তা থেকে মহাসড়কে ওঠার সময় এ মারাত্মক দুর্ঘটনা টি ঘটে।
"এখানে মাঝেমধ্যেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরিভাবে এখানে একটা স্প্রিড ব্রেকার নির্মাণ করা প্রয়োজন।"
নিহত শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইসহ কয়েকজন শিক্ষক নিয়ামতপুর থেকে অটোরিকশা যোগে নওগাঁ শহরে প্রশিক্ষণের জন্য আসছিলেন। পথিমধ্যে ট্রাকের চাপায় তার ভাইসহ পাঁচজন মারা যায়।
"খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি লাশ থানায় নিয়ে গেছে।"
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস ইউনিট উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে এক নারীসহ পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
"দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশাটির বিভিন্ন অংশ পৃথক পৃথক ভাবে কেটে কেটে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাকটি উদ্ধার করা হবে।"
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস কর্মী পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।
"ঘটনার পর ট্রাক চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে", বলেন তিনি।
নিহতরা হলেন, নিয়ামতপুর উপজেলার আমকুড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক (বাংলা) লেলিন সরকার (৫০), বেলকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গণিত) মকবুল হোসেন (৪৫), পানিহারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গণিত) দেলোয়ার হোসেন (৪২) ও গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) জান্নাতুন ফেরদৌস (৪০) এবং অটোরিকশা চালক উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সেলিম (৪৫)। আহত শিক্ষক কড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) নুরজাহান বেগম (৩৮)।
অটোরিকশা চালক ও শিক্ষকদের সবার বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলায়।