'আমি নিতান্তই বোকা একটি মেয়ে ছিলাম যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল', শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরার আকুতি
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক আইএস বধূ শামীমা বেগম (২১) বলেছেন, তার কোন পুনর্বাসনের দরকার নেই; বরং তিনি শীঘ্রই যুক্তরাজ্যে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। অন্যদের পুনর্বাসনে সহায়তা করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন তিনি।
২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন শামীমা।
যুক্তরাজ্য থেকে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পর বর্তমানে সিরিয়ায় উত্তরে অবস্থিত আল-রোজ ক্যাম্পে রয়েছেন শামীমা। এ ক্যাম্পে প্রায় ৮০০ পরিবারের বাস।
সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা বলেন, "আমি নিজেকে জঙ্গি হিসেবে মনে করি না। আমি নিতান্তই বোকা একটি মেয়ে ছিলাম যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে আমার পুনর্বাসন দরকার, তবে আমি অন্যদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে চাই। তাদের সাহায্য করতে পারলে আমি অত্যন্ত খুশি হবো"।
শামীমাকে এখন ইসলামিক ভাবধারার পোশাক কিংবা হিজাব পরতেও দেখা যায় না। বেসবল ক্যাপ, চাপা জিন্স আর টিশার্ট পরে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন শামীমা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি এখন হিজাব না পরে পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক পরি কারণ এটি আমাকে আনন্দ দেয়। আর এই ক্যাম্পে যা কিছুই আমাকে আনন্দ দেয় তাই আমার জন্য জীবনরক্ষার সামিল"।
মার্কিন তারকা র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্টের সংগীত পছন্দ শামীমার। টেলিভিশনে আরেক রিয়েলিটি তারকা কিম কারদাশিয়ানের সঙ্গে কানিয়ের বিবাহবিচ্ছেদের সব খবর দেখেছেন তিনি। ক্যাম্পে বসে কিছুদিন আগেই প্রচারিত হওয়া জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'ফ্রেন্ডস' এর 'রিইউনিয়ন'ও দেখেছেন বলে জানান শামীমা।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন এলাকা থেকে আরো দুজন বান্ধবী সহ শামীমা বেগম আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পালিয়ে যান এবং একজন ডাচ নাগরিককে বিয়ে করেন। আল-রোজ ক্যাম্পে আসার আগে শামীমার তিনটি সন্তান ছিল। শামীমার শিশু সন্তানেরা প্রত্যেকে ক্ষুধা অথবা অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করে। তার স্বামী কুর্দিদের দ্বারা পরিচালিত সিরিয়ার কারাগারে বন্দী আছেন বলে ধারণা করা হয়।
যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সালে শামীমা প্রথমবারের মতো চিহ্নিত হন। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে যুক্তরাজ্যে ফেরার আবেদন নাকচ করে।
আমিরা ও খাদিজা নামে যে দুই বান্ধবীর সাথে ঘর ছেড়েছিলেন শামীমা, তাদের কেউই আর বেঁচে নেই। বাগুজ শহরে তাদের হত্যা করা হয়। তাদের অভিভাবকদের এ মৃত্যু সংবাদ দিতে কতটা কষ্ট হয়েছিল শামীমার, সে কথাও উল্লেখ করেন সাক্ষাৎকারে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে শামীমা বলে ওঠেন, " আজ মনে হয় আর কোন বন্ধুই নেই আমার। তারাই ছিল আমার সব"।
তাছাড়া একে একে তিনটি সন্তানকে হারানোর পরও অত্যন্ত ভেঙে পড়েন শামীমা, জানান আত্মহত্যার চিন্তাও এসেছিল সে সময়। পরে তিনি যুক্তরাজ্যের কাছে তাকে আরেকটি সুযোগ দেবার আবেদন করেন।
যুক্তরাজ্যবাসী তার ঘর ছাড়ার কারণ বুঝবেন এবং তার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে খোলা মনে তাকে গ্রহণ করে নেবেন এটাই শামীমার প্রত্যাশা।
যুক্তরাজ্যের যেসকল নাগরিক শামীমার ফিরে আসা সমর্থন করছেন না তাদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি করে আকুতি জানিয়ে শামীমা বলেন, "আমি কি সত্যিই ঘরে ফিরতে আসতে পারি না, প্লিজ?"
- সূত্র- ডেইলি মেইল