‘সরল’ ছিলেন, বন্ধুদের থেকে আলাদা হতে চাননি বলেই সিরিয়ায় পাড়ি জমান শামীমা
বন্ধুরা সিরিয়ায় ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পর 'পেছনে পড়ে থাকতে চাননি' বলেই যুক্তরাজ্য ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক আইএস বধূ শামীমা বেগম।
এছাড়া, তখন তিনি 'অল্পবয়সী এবং সরল' ছিলেন বলেও দাবী করেন ২১ বছর বয়সী শামীমা। যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ার মানুষকে সহায়তা করতে বেথনাল গ্রিনের দুই সহপাঠী আমিরা আবাসি এবং খাদিজা সুলতানার সাথে সিরিয়ায় পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন শামীমা। সম্প্রতি প্রকাশিত সিরিয়ার আইএস জীবনের ওপর শরণার্থী শিবিরে নির্মিত এক তথ্যচিত্রে শামীমার প্রথম বিবৃতি তুলে ধরা হয়। সেখানে তিনি বন্ধুদের থেকে পিছিয়ে পড়তে চাননি বলে আইএসে যোগদান করেছিলেন বলে দাবী করেন।
আইএস সমর্থকরা অনলাইনের মাধ্যমে শামীমা ও তার বন্ধুদের যুক্ত করে বলেও জানান পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিনে বেড়ে ওঠা শামীমা। সিরিয়ার যুদ্ধে মুসলিমদের ভোগান্তি দেখে তারা ব্যথিত হয়েছিলেন। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলা হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
'দ্য রিটার্ন: লাইফ আফটার আইসিস' শিরোনামের তথ্যচিত্রে সিরিয়ায় পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলেন শামীমা। তিনি বলেন, "আমি জানতাম যে এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। কিন্তু, আমার মনে হয়েছিল যা করার দ্রুত করতে হবে।"
"আমি বন্ধুদের মধ্যে এমন একজন হতে চাইনি যে পেছনে পড়ে আছে," বলেন তিনি।
সিরিয়ার যুদ্ধে নিজের তিন সন্তানকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন শামীমা। সন্তান হারানোর শোকে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মেয়ের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে বেগম বলেন, "সে মারা যাওয়ার পর আমার জন্য বিষয়টি গ্রহণ করা বেশ কঠিন ছিল। আমার ভীষণ একা লাগছিল। মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবী আমার চোখের সামনে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ছে আর আমি কিছুই করতে পারছি না।"
"সে (শামীমার মেয়ে) যখন মারা যায়, সে সময় আমি শুধু নিজেকে শেষ করে ফেলার কথা ভাবতাম। আমার মনে হত, বোমা ফাটলেও আমি আর দৌড়ে পালাতে পারব না," বলেন তিনি।
তুরস্ক এবং ইরানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্প শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৮০০ পরিবার বসবাস করে।
৯০ মিনিটের তথ্যচিত্রে শামীমা অভিযোগ করেন যে, সরকার তার নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার সময় উগ্রপন্থীদের প্রতি তার সমর্থনের মিথ্যা গল্পের জাল বুনে। তিনি দাবি করেন, শিবিরে নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পেতেন বলেই তিনি আইসিসের বিরুদ্ধে মুখ খোলা থেকে বিরত ছিলেন।
দুই সহপাঠী আমিরা আবাসি এবং খাদিজা সুলতানার মৃত্যু সংবাদও তাদের বাবা-মায়ের কাছে জানাতে হয়েছিলো শামীমাকে। নিহত বন্ধুদের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে তার মন ভেঙে গিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাঁদতে কাঁদতে নিজের গল্পের পুনরাবৃত্তি করে শামীমা বলেন, "এখন মনে হয় যে আমার কোনো বন্ধু নেই। ওরাই আমার সবকিছু ছিল।"
যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য 'দ্বিতীয় সুযোগ'ও চেয়েছিলেন শামীমা। ব্রিটিশ জনগণকে তিনি 'উদারমনস্ক' ভেবেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন। শামীমা আশা করেছিলে ব্রিটিশরা তার চলে যাওয়ার কারণ বুঝবে এবং বর্তমানে তিনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন সেই বিষয়টি মূল্যায়ন করবে। ঘরে ফিরিয়ে নিতে তিনি যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান।
শামীমা বলেন, আইসিসের অপরাধের জন্য মানুষ ভুল করে তাকে দায়ী ভাবে।
সেসময় তিনি 'সরল' ছিলেন এখন সেটা বুঝতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন শামীমা। একইসঙ্গে জানান যে এখন তিনি আইসিসের মূল্যবোধও প্রত্যাখান করেছেন।
"তারা মনে করে যে আমি এই অপরাধগুলোর বিষয়ে জানতাম এবং তা সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি সত্য নয়," বলেন তিনি।
"তারা (আইএস) যা করেছে, আমি কখনোই এরকম কিছু সমর্থন করব না," বলেন শামীমা।
যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সালে শামীমা প্রথমবারের মতো চিহ্নিত হন। সেসময় তিনি স্বামী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে গর্ভবতী ছিলেন।
জন্মগ্রহণের পর তার তৃতীয় সন্তানও মৃত্যুবরণ করে। তথ্যচিত্রে, তিন সন্তানকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে তিনি ভেঙে পড়েন।
যুক্তরাজ্য থেকে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পর রোজ ক্যাম্পে অবস্থানরত একাধিক ব্রিটিশ নারীর মধ্যে শামীমা একজন।
২০১৫ সালে ডাচ নাগরিককে বিয়ে করতে স্কুলের অপর দুই সহপাঠীর সাথে শামীমা সিরিয়ায় পালিয়ে যান।
ফেব্রুয়ারি মাসে, যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে যুক্তরাজ্যে ফেরার আবেদন নাকচ করে।
- সূত্র-ডেইলি মেইল