‘বসনিয়ার কসাই’ রাতকো ম্লাদিচের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল
সাবেক বসনীয় সার্ব কমান্ডার, 'বুচার অফ বসনিয়া' বা 'বসনিয়ার কসাই' নামে পরিচিত রাতকো ম্লাদিচের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছে জাতিসংঘ আদালত।
মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও গণহত্যার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে ম্লাদিচও পালটা আপিল করেন। কিন্তু জাতিসংঘ আদালত তার চূড়ান্ত আপিল নাকচ করে দেয়। হোয়াইট হাউজ এই রায়কে 'ঐতিহাসিক' বলে অভিহিত করেছে।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে এদিনের শুনানিতে বিচারক রায় পড়ে শোনানোর সময় খানিকটা আবেগাপ্লুত হয়ে যান ৭৮ বছর বয়সী ম্লাদিচ।
কালো স্যুট আর আকাশিরঙা টাই পরিহিত ম্লাদিচ বিরক্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে তার আপিল প্রত্যাখাত হওয়ার রায় শুনছিলেন। উৎখাত, জোরপূর্বক উচ্ছেদ, সন্ত্রাস, জিম্মি করা এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর অনৈতিকভাবে হামলাসহ তার বিরুদ্ধে আনা ১০ টি অভিযোগের কথা এসময় বিচারক পড়ে শোনান। আদালত কক্ষে ম্লাদিচই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি মাস্ক পরেননি।
রায় ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে 'আশার মুহূর্ত' বলে উল্লেখ করে বলেন, 'এই ঐতিহাসিক রায় আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, যারা জঘন্য অপরাধ করবে তাদের শাস্তি হবেই। এটি আমাদের আগামী দিনে এ ধরনের অপরাধ সংঘটন থেকে বিরত রাখবে, তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেনো। ম্লাদিচের নৃশংসতার হাত থেকে যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি রইলো। আমরা মৃত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে পারবো না ঠিকই, কিন্তু এই বিচারের রায়ের মাধ্যমে আমরা তাদের সামান্য হলেও শান্তি দিতে পারবো।'
যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর দেশটির নৃগোষ্ঠিদের উৎখাত ও গৃহযুদ্ধের পেছনের মূল কারিগর, সাবেক বসনীয় সার্ব প্রেসিডেন্ট রাদোভান কারাদিচ ছিলেন ম্লাদিচের রাজনৈতিক গুরু, তাদের দুইজনের ভাগ্যেই একই পরিণতি লেখা ছিল।
২০১১ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সাবেক এই বসনীয় কমান্ডার প্রায় এক দশক ধরে আইনের হাত থেকে পালিয়ে ছিলেন। ১৯৯২ সালের মে থেকে ১৯৯৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে গোলাবারুদ নিক্ষেপের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে বসনিয়ার মুসলিম ও ক্রোটদের স্থায়ীভাবে উৎখাতের মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছিলেন ম্লাদিচ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম গণহত্যা সংঘটনের পেছনেও ছিল ম্লাদিচেরই হাত। তিনি সেব্রেনিকা থেকে বসনীয় মুসলিমদের উচ্ছেদ করেন। ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই থেকে ১৯৯৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষ ও বালকদের হত্যা করা এবং জোরপূর্বক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের তাড়িয়ে দেওয়া।
সেব্রেনিকায় চালানো গণহত্যায় প্রায় ৮ হাজার মানুষ নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশকেই বাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে গুলি করার পর লাশগুলো গণকবর দেয়া হয়। মূল বিচারকার্যের সময় গণহত্যায় ম্লাদিচের শামিল থাকার ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়েছিল।
২০ বছরেরও বেশি সময় পর 'স্রেব্রেনিকা গণহত্যা'সহ বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেন ম্লাদিচ। বিচারকের উদ্দেশ্যে চিৎকার এবং কোর্ট থেকে ম্লাদিচকে বের করে দেওয়ার জন্য এই রায় পাঠে আধা ঘন্টারও বেশি সময় বিলম্ব হয়।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান