এ যেন এক কঠিন পরীক্ষা সৌম্য-সাদমানদের
করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্থবির অবস্থা ছিল দীর্ঘ সময়। এ সময়ে ঘরবন্দি থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটারদের শুয়ে-বসে থাকার সুযোগ ছিল না। যখনই মাঠে ফেরা হোক, নিজেকে পুরোপুরি ফিট রাখতে হবে- এই তাড়না থেকে নিজেদের মতো করে ফিটনেসের কাজ চালিয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা।
সবার মুখেই শোনা গেছে বাড়িতে নিজের মতো করে ফিটনেস নিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু বাড়ি আর মাঠের অনুশীলন যে এক নয়, সেটা একক অনুশীলনের প্রথম দিনই বোঝা গেছে। গত ১৯ জুলাই ছিল একক অনুশীলনের প্রথমদিন। সেদিন মিরপুরের একাডেমি মাঠে মুশফিকুর রহিমের হাঁপিয়ে ওঠার দৃশ্যই বলে দিচ্ছিল, কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বাকি ক্রিকেটারদের জন্য।
১৯ জুলাই একাডেমি মাঠে রানিং শেষে হাঁটুতে হাত রেখে অনেকক্ষণ উপুর হয়ে থাকেন মুশফিক। এরপর মাঠে শুয়ে পড়েন তিনি, এভাবে থাকেন ১৫ মিনিটের মতো। ৩০ মিনিট রানিং করে হাঁপিয়ে ওঠা শফিউল একাডেমি মাঠের এক কোণে গিয়ে বসে পড়েন। প্রথম দিনের অনুশীলনের পর চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে নেন বেশিরভাগ ক্রিকেটার।
ঈদের ছুটির পর গত শনিবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে একক অনুশীলন। আগের সাত ক্রিকেটারের সঙ্গে আরও আটজন ক্রিকেটার একক অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন সৌম্য সরকার ও সাদমান ইসলাম অনিক। সোমবার অনুশীলন ছিল এই দুই ক্রিকেটারের। ঠিক সময়েই মাঠে এসে হাজির হন দুজন। কিন্তু আগের মতো করে ঠিকভাবে অনুশীলন করতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা তাদের।
সূচি অনুযায়ী রানিং ও জিমের আগে ইনডোরে ব্যাটিং ছিল সৌম্য ও সাদমানের। ব্যাটিংয়ের পর মিরপুরের মূল মাঠে রানিং শুরু করেন এই দুই ক্রিকেটার। রানিং করতে গিয়ে রীতিমতো কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে যান তারা। এতোদিন পর রানিং করতে যে বেশ খাটনি যাচ্ছে, খুব সহজেই সেটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সামান্য দৌড়েই হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা সৌম্য-সাদমানদের।
পুরো রানিং সেশনে এই দুই ব্যাটসম্যানকে খুব ক্লান্ত দেখিয়েছে। রানিংয়ের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেন সৌম্য ও সাদমান। একবারে ৪০০ মিটার করে দৌড়েছেন তারা। মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল মাঠে ৪০০ মিটারের এক রাউন্ড শেষে শুয়ে পড়েন সৌম্য। পুরো রানিং সেশন এভাবেই পার করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
সাদমানকে অবশ্য মাঠে শুয়ে পড়তে দেখা যায়নি। ৪০০ মিটারের প্রতিটি রাউন্ড শেষ করে রানিং মার্কে বসে পড়েন বাঁহাতি এই ওপেনার। আবার দৌড় শুরু করতে সৌম্যের মতো অন্তত চার মিনিটের বিরতি নেন সাদমানও। ৪০ মিনিটের রানিংয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ মিনিট বিশ্রাম নিয়েছেন সৌম্য-সাদমান।
সূচি অনুযায়ী সোমবার অনুশীলন করেছেন আরও আটজন ক্রিকেটার। সৌম্য-সাদমানের মতো ইনডোরে ব্যাটিংয়ের পর রানিং ও জিম করেছেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, এনামুল হক বিজয়রা। রানিংয়ের পর একাডেমি মাঠে বোলিং করেছেন শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবরা।
অন্যান্য সময় বল বা ব্যাট হাতে পরীক্ষা দিতে হলেও বর্তমানে ফিটনেস ফিরে পেতে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। ফিটনেস ফিরে পেতে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, প্রায় সব ক্রিকেটারই এটা স্বীকার করে নিয়েছেন। প্রথম দিন মাঠের অনুশীলন করে এনামুল হক বিজয় তো বলে দেন, 'কষ্টই হয়েছে মাঠের অনুশীলনে ফিরে।' সবাই এভাবে না বললেও মাঠের চিত্র বলে দেয়, আপাতত ফিটনেস ফিরে পাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ ক্রিকেটারদের জন্য।