দাপুটে জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো বাংলাদেশ
প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ খোয়া গেছে। শেষ ম্যাচ থেকে পাওয়ার কিছু ছিল না বাংলাদেশের, বরং হারানোর ছিল অনেক। আইসিসির সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হলে বিশ্বকাপের আগে তা বাংলাদেশ শিবিরে সাইক্লোন হয়ে আঘাত হানতো, তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচ হারেই ঝড়ের বেগ বুঝতে পেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সেই ঝড়ের গতিতে কিছুটা বাধ দেওয়া গেল শেষ ম্যাচ জয়ে। দাপুটে ব্যাটিংয়ে বিশাল জয়ে সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ।
শনিবার টেক্সাসের হিউস্টনে প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জিতলো তারা। এই জয়ে ২-১-এ সিরিজ শেষ করলো সফরকারীরা, প্রতিপক্ষকে বোঝালো তাদের সঙ্গে আসল ব্যবধানও। আগের দুই ম্যাচের দলটি যে বাংলাদেশের আসল সমার্থ্য নয়, সেটাও বোঝা গেল। অবশ্য আজকে যেভাবে জিতেছে, সেটাও তাদের প্রকৃত রূপ নয়। প্রথম দুই ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচের বাংলাদেশকে মেলানোই গেল না। ব্যাটিং-বোলিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের তফাৎ হলো আকাশ-পাতাল।
এই ব্যবধানের কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দলের একাদশের পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করা যায়। সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আজকের ম্যাচে অধিনায়ক মোনান্ক প্যাটেল, ওপেনার স্টিভেন টেইলর, অলরাউন্ডার হারমিত সিং ও পেসার আলী খানকে বিশ্রাম দেয় তারা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিং শক্তি কমেছে, সঙ্গে ছিল ম্যাচসেরা মুস্তাফিজুর রহমানের আগুনে বোলিংয়ের তোপ।
বাঁহাতি এই পেসারের নিজের ও দেশের পক্ষে করা সেরা বোলিংয়ে ৯ উইকেটে ১০৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা, দলটির কেউ ৩০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। ছয়জন দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। জবাবে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ১১.৪ ওভারেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। চরম বাজে পারফরম্যান্সে আগের দুই ম্যাচ হারা দলটিই আজ ৫০ বল ও সবগুলো উইকেট হারে রেখে জেতে।
শুরু থেকেই শাসন করে খেলতে থাকেন তানজিদ ও সৌম্য। পুরো ইনিংসে যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি এ দুজন। হেসেখেলেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ৭০ বলে ১০৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া তানজিদ-সৌম্য। টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো শতরানের উদ্বোধনী জুটি পেল দলটি। তানজিদ ৪২ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৮ ও সৌম্য ২৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন। টি-টোয়েন্টিতে এটা তানজিদের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
এর আগে ব্যাটিং করা যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত স্কোর দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের শুরুটা কেমন ছিল। ১০৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটিই উদ্বোধনী জুটিতে ৫ ওভারে ৪৬ রান তোলে। দলকে বড় শুরুর ভিতই গড়ে দেন দুই ওপেনার অ্যান্ড্রিস গাউস ও অভিষিক্ত শায়ান জাহাঙ্গীর। গাউস ১৫ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন। তানজিম হাসান সাকিবের ওভারে টানা তিনটি চারসহ মোট চারটি চার মারেন তিনি।
গাউসকে ফিরিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৭০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান সাকিব। উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই দিক হারায় যুক্তরাষ্ট্র। পরের ওভারে জাহাঙ্গীরকে ফেরান ৬ উইকেট নিয়ে নিজের ও দেশের পক্ষে সেরা বোলিং করা মুস্তাফিজ। এরপর তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেন একটি করে উইকেট নেন, উইকেট বৃষ্টি নামানো মুস্তাফিজ বাকি ৫ উইকেট শিকার করেন।
দুই ওপেনারের পর কেবল কোরি এন্ডারসন ও শ্যাডলে ভ্যান শাল্কভিক কিছুটা সময় লড়েন। এন্ডারসন ১৮ ও শ্যাডলে ১২ রান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংসে ব্যাটিং করা ১০ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। স্বাগতিকদের দিক ভুলিয়ে দেওয়া মুস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৬ উইকেট নেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা, দেশের পক্ষেও সেরা। আগের সেরা বোলিংও তারই ছিল।
মুস্তাফিজের বোলিং ফিগারটি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অষ্টম সেরা বোলিং। সাকিব, তানজিম ও রিশাদ একটি করে উইকেট নেন। রিশাদ বেশি উইকেট না পেলেও রান কৃপণ বোলিং রেকর্ড গড়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে এক ম্যাচে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড এখন তার দখলে। ৪ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ৭ রান দেন এই লেগ স্পিনার। এতোদিন রেকর্ডটি ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দখলে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ৪ ওভারে এক মেডেনসহ ৮ রানে এক উইকেট নেন তিনি।