সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ১৪ দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইসকনের স্মারকলিপি
বিগত সপ্তাহজুড়ে শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অংশে মন্দির-মণ্ডপ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, নারীদের শ্লীলতাহানি ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।
স্মারকলিপিতে এসব ঘটনায় বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা, সহিংসতায় আহত-নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরগুলোর পুনঃনির্মাণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদান্সহ এ ধরনের ঘটনার পুন্রয়াবৃত্তি রোধের দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে ইসকনের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
বিশেষ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে এসমস্ত সহিংসতার বিচার করা, নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, অনতিবিলম্বে ইসকন মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামণ্ডপ, ঘরবাড়ি, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ও ভক্তদের হত্যাকারী ও নারীদের শ্লীলতাহানিকারীদের জনসমক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
দেশব্যাপী সংঘঠিত সহিংস ও নারকীয় ঘটনায় আহত সমস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীকে সরকারের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ইসকন মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির ও দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় আহত-নিহতদের পরিবার প্রতি ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইসকন।
পাশাপাশি, প্রতি পরিবার হতে একজনকে সরকারি চাকরি প্রদান করা ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ, প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া, নারীদের শ্লীলহাহানির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ধর্ম অবমাননার বানোয়াট, কল্পিত, বায়বীয়, মিথ্যা অভিযোগে কোনো হিন্দুকে হয়রানি করা, ক্ষতিগ্রস্ত করা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা বন্ধ করা, এসকল অভিযোগে আটক সকল হিন্দুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ও বৈষয়িক ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া রয়েছে ধর্মের ব্যবহার করে হিংস্র উস্কানিমূলক ঘটনা রোধে আন্তঃধর্মীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল বা কমিটি গঠন করে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা, সোশাল মিডিয়া বা অন্য কোথাও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও তার ভিডিও ভাইরাল করা বন্ধ করার দাবি।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি রোধ করে দুষ্কৃতিকারীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানসহ দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা এবং এদেশ থেকে হিন্দুদের বিলুপ্তি, হিন্দু নিধন, হিন্দু নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা রোধে হিন্দু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তোলা হয়েছে।
এদেশে হিন্দুদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের, জীবনধারণের ও সম-অধিকার রক্ষাসহ নিজ ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন করা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়া রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও রয়েছে ১৪ দফার দাবিতে।
সর্বোপরি, ধর্মান্ধ মৌলবাদী মানবতা ও স্বাধীনতা বিরোধী অপকর্মের দ্বারা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা রোধ করা ও উপর্যুক্ত লক্ষ্য অর্জনে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের দাবি তোলা হয়েছে।
গত বুধবার কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ, মন্দির, বাড়িঘর এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।