রম্য রচনা | ‘পালাবি কোথায়’
এক্সিট দ্য ড্রাগন, এন্টার দ্য টাইগার ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ব্রুস লি'র জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্র। সুপারহিট মানে বিশ্বজুড়ে সুপারহিট। এখানে প্রস্থানের কথা আছে, প্রবেশের কথাও। প্রস্থান ও প্রবেশ মিলে সুপারহিট হয়েছে এক্সিট দ্য ড্রাগন, এন্টার দ্য টাইগার।
ব্রুস লি'র ওই চলচ্চিত্রের ৪৮ বছর পর এসেছে ওয়েব সিরিজ কারাগার। এখানে নাটকীয় প্রবেশের কথা আছে। এটিও সুপারহিট।
তুলনায় সুপার ফ্লপ পালাবি কোথায়। এর নাম হয়তো আমরা খুব বেশি জানি না। ফ্লপ তাই জানার কথাও না। এটি একটি বাংলা সিনেমা। মুক্তি পেয়েছিল এক্সিট দ্য ড্রাগন, এন্টার দ্য টাইগার এবং কারাগার রিলিজের মাঝামাঝি সময়ে; ১৯৯৭ সালে।
তিনটি চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজের মধ্যে কোথাও কোনো কিছুর মিল নেই। মিল যদি খুঁজে নিতে চাই সেটা নাম বা কাহিনীতে থাকা প্রবেশ ও প্রস্থানের মধ্যে। ব্যস এটুকুই।
এই প্রবেশ ও প্রস্থানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে প্রবেশে সফলতা আছে, প্রস্থানে ধরা। পালাবি কোথায় তাই ফ্লপ। বাস্তবে এরকম একটি ফ্লপ ঘটনার জন্ম দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চারজন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর খবরে বলা হচ্ছে:
বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর পরপরই তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কারাগারে কনডেম সেল থেকে আসামিরা পালিয়ে যায়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনার সঙ্গেও কারাগার ওয়েব সিরিজের কিছুটা মিল এবং অমিল দুটোই আছে।
প্রথমে মিলের কথা বলি। সিরিজটিতে মেঝে ফুটো করে ব্রিটিশ আমলের আগের যুগ থেকে এসে কারাগারে ঢুকে পড়েছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। আর বগুড়ার ঘটনায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কারাগারের ছাদ ফুটো করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফাঁসির আদেশ পাওয়া চারজন।
অমিল হলো: চঞ্চল নিজের ইচ্ছায় (মিশন যা-ই হোক) কারাগারে এসেছিলেন। আর বগুড়ার চারজন কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। চঞ্চল এসেছিলেন অতীত থেকে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন ভবিষ্যতের দিকে এক পা-ও এগোতে পারেননি। খুবই কম সময়ের মধ্যেই পুলিশের হাতে আটক হন তারা।
টিবিএস-এর সংবাদ অনুযায়ী: পুলিশ সুপার বলেন, 'মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে চার আসামি ছাদ ফুটো করে বের হয়। এরপর তারা বিছানার চাদর ব্যবহার করে দেওয়াল টপকে বাইরে বের হয়। ভোর ৩টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের একাধিক টিম সংবাদ পেয়ে শহরে তল্লাশি শুরু করে। ভোর ৪টা ১০ মিনিটে শহরের চেলোপাড়া চাষী বাজার থেকে চারজনকেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।'
মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন মানে অবশ্যই তারা দাগি আসামি। দাগি আসামিদের অল্প সময়ের মধ্যেই ধরে ফেলতে পারা আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্য এক বড় সাফল্য। এজন্য তাদের অভিনন্দন।
তবে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে যারা সাধারণের কাছে 'মোস্ট ওয়ান্টেড', তারা কিন্তু ঠিকই পালিয়ে গেছেন।
দৈনিক প্রথম আলোর একটি খবর এরকম:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসার পর থেকে তাঁকে নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। দুর্নীতির জন্য তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। বেনজীর আহমেদ এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র আজ শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে, বেনজীর আহমেদ দেশে নেই।
আর দৈনিক জনকণ্ঠ এক সংবাদে জানাচ্ছে:
মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
মানে কি তাহলে এই যে আপনি যদি ক্ষমতাবান হন তাহলে আপনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন?
যদি তা-ই হয় তাহলে আপনি মনে মনে শুধু শান্তি পেতে পারেন নার্গিস ফখরির 'পালাবি কোথায়' গানটি শুনে:
'নেশা নেশা লাগেরে নেশা লাগে মনে
যাবিরে তুই পুড়ে রূপেরই এ আগুনে
পালাবি কোথায় পালাবি কোথায়
নাইরে উপায় নাইরে উপায়।'
এটা আসলে মনে মনে সুখ। এ সুখ প্রকাশের আরও শব্দ আছে। সেটা না হয় লিখলাম না। বাস্তবতা হচ্ছে, আদুরে 'টাইগার' শাবকের মতো তারা 'এন্টার' করছেন। এরপর 'এক্সিট' নিচ্ছেন টাকার কুমির বা 'ড্রাগন' হয়ে। আর তাদের দাপটে আমরা সাধারণেরা এক 'কারাগার'-এ বন্দি হয়ে দেখছি দুর্নীতিবাজদের উল্লাসের নৃত্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।