ট্রাম্প ঘটনায় আলোচিত কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে থাকা সম্পর্কের সুবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে স্টর্মি ড্যানিয়েলস হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত নাম।
ড্যানিয়েলস দাবি করেছেন তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ট্রাম্পের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করেছিলেন ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে, ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাডার সীমান্তে থাকা লেক টাহোতে অনুষ্ঠিত এক চ্যারিটি গলফ ম্যাচে। পরিচালক জুড আপাটোর ২০০৫ সালের চলচ্চিত্র 'দ্য ফোর্টি ইয়ার ওল্ড ভার্জিন' চলচ্চিত্রেও কিছু সময়ের জন্য অভিনয় করেছিলেন এই পর্নোতারকা।
দুজনের সাক্ষাতের সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৬০, অন্যদিকে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বয়স ছিল ২৭। ড্যানিয়েলসের দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্প তার হোটেলের স্যুইটে তাকে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ডিনারের সময় ট্রাম্প পায়জামা পরে ছিলেন বলেও জানান তিনি।
ড্যানিয়েলসের দাবি অনুযায়ী, "এটি সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে যৌনমিলনের অভিজ্ঞতা।" এদিকে ট্রাম্প সরাসরি ড্যানিয়েলসের সাথে কোনো ধরনের যৌন সম্পর্ক না থাকার দাবি করেছেন এবং তার দাবিকে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে যেটুকু নিশ্চিতভাবে জানা যায় তা হলো, ড্যানিয়েলস ২০১৬ প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের আগে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ট্রাম্পের কাছ থেকে ১,৩০,০০০ ডলার পেয়েছিলেন, যেখানে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহ্যাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অভিযোগের মূল ভিত্তিই হলো এই 'হাশ মানি', যেটি নির্বাচনী প্রচারণার আইন ভেঙেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০১৮ সালে এই অর্থ লেনদেনের খবর প্রকাশ পেতেই ড্যানিয়েলস আদালতকে তার তথ্য প্রকাশ না করার চুক্তি বাতিলের অনুরোধ করেন এবং বিভিন্ন টেলিভিশনে এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকার দেওয়া শুরু করেন।
সিবিএসের সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরিই বলেন, "আমি কোনো ভিক্টিম নই"। যদিও ট্রাম্পের প্রতি শারীরিকভাবে আকর্ষণ নেই তার, তারপরও দুজনের সম্মতিতেই লেক টাহোতে সেই রাতে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড্যানিয়েলস জানান, ঐ সময়ে চলা ট্রাম্পের টিভি শো 'দ্য অ্যাপ্রেন্টিস'-এ তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প কি তাকে লোভ দেখিয়েছিলেন প্রশ্নের জবাবে ড্যানিয়েলস জানান, "অবশ্যই। আমি তো আর অন্ধ নই। হয়তো এই সম্পর্ক আরও দূর যেত।" ড্যানিয়েলস এই সম্পর্ককে নিজের ক্যারিয়ারে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন।
নিজের স্টেজ নাম স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে পছন্দ করা স্টেফানি ক্লিফোর্ড জন্ম নিয়েছেন লুইজিনিয়ার ব্যাটন রুজে, যিনি বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর মায়ের কাছেই বড় হন। নিজের পরিবারের কাছে অবহেলার শিকার হওয়া ড্যানিয়েলস নয় বছর বয়সেই যৌন হেনস্তার শিকার হন বলে ২০১৮ সালের এক স্মৃতিকথায় লিখেছেন। এসবের পরও তিনি একজন ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন।
তবে জীবিকার তাগিদে তিনি একসময় স্ট্রিপটিজে জড়িয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে পর্নো অভিনেত্রী হিসেবে নাম লেখান, যেখানে তিনি বড় মাপের অভিনেত্রী, পরিচালক এবং স্ক্রিনরাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। জিতেছেন বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ডও।
অপমান ও প্রত্যুত্তর
ড্যানিয়েলসকে 'হর্স ফেস' নাম দেওয়া ট্রাম্পের সমর্থকরাও একই নামে সামাজিক মাধ্যমে ড্যানিয়েলসকে নিয়মিতভাবে অপমান করে থাকেন। তবে কয়েক বছর আগে মার্কিন রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ৪৪ বছর বয়সী ড্যানিয়েলস এই স্পটলাইট ভালোভাবেই সামলিয়েছেন। প্রত্যুত্তর হিসেবে তিনিও ট্রাম্পের দৈহিক গড়নের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে অপমানজনক 'টাইনি (ক্ষুদ্র)' নাম দিয়েছেন।
২০১০ সালে লুইজিয়ানায় সিনেট পদপ্রার্থী হিসেবে চেষ্টা করা ড্যানিয়েলস একজন মেয়ের মা, এবং গত বছর তার চতুর্থ স্বামী ও পর্নো তারকা ব্যারেট ব্লেডকে বিয়ে করেছেন।
"আমার কাছে এত মেসেজ এসেছে যে আমি সবগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় বের করতে পারছি না... তাছাড়া আমি আমার শ্যাম্পেনও নষ্ট করতে চাই না," বলে টুইট করেন ড্যানিয়েলস। মূলত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরই স্টর্মি এই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
তবে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আইনজীবিরা তার মতো এত উৎসাহী নন। তারা এক বিবৃতিতে জানান, "ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ইন্ডাইক্টমেন্ট কোনো আনন্দের বিষয় নয়। জুরিদের কঠোর পরিশ্রম এবং বিবেককে অবশ্যই শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ। সত্য আর ন্যায়বিচারের জয় হোক।"
সূত্র: আল জাজিরা