বিশ্বের প্রথম ‘দাঁত গজানোর ওষুধ’ তৈরি করছে জাপানি স্টার্টআপ, অচিরেই শুরু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল
নতুন দাঁত গজানোর ওষুধ বাজারে নিয়ে আসার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে জাপানের স্টার্টআপ তোরেগেম বায়োফার্মা।
জাপান টাইমস-এর তথ্যানুসারে, কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে তোরেগেম বায়োফার্মার নেতৃত্বাধীন একটি দল গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। মানুষের নতুন দাঁত গজাতে এবং জন্মগত কারণে যাদের পুরো এক পাটি দাঁত নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি সাহায্য করবে।
জাপানের ওসাকায় মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিটানো হাসপাতালের দন্তচিকিৎসা এবং ওরাল সার্জারি বিভাগের প্রধান কাৎসু তাকাহাশি প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন ওষুধটি নিয়ে।
ইয়াহু ফাইন্যান্স-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে আণবিক জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সময় তাকাহাশি এ ওষুধ নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে মিলে তারা একটি জিন শনাক্ত করেন, যেটি ইউএসএজি-১ প্রোটিন উৎপাদনের জন্য দায়ী--যা দাঁত গজানোর সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের ইঁদুরের দাঁত গজানোর সঙ্গে কোন জিন সম্পর্কিত, তা অন্বেষণে গবেষণা করে দেখে তাকাহাশির দল ইউএসএজি-১ প্রোটিনকে টার্গেট করে একটি অ্যান্টিবডি তৈরির উদ্যোগ নেন, যা বাড়তি দাঁত গজানো ত্বরান্বিত করে।
দাঁতের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে যে ইউএসজি-১ প্রোটিন, সেই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় তাদের তৈরি ওষুধ।
ফিউচারিজম ডটকম জানিয়েছে, রোগীদের ইউএসজি-১ প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্য অ্যান্টিবডি চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ প্রোটিন 'টুথ বাড'কে দাঁত গজাতে দেয় না।
২০১৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রাথমিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, স্বাভাবিকসংখ্যক দাঁত রয়েছে এমন একটি ইঁদুরকে এই অ্যান্টিবডিভিত্তিক ওষুধ দেওয়ার পর প্রাণীটির নতুন দাঁত গজিয়েছে। ইঁদুরের ওপর সফল পরীক্ষা চালানোর পর দলটি ফেরেটের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়।
এই ওষুধ নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করতে ২০২৪ সালের জুলাইয়েই সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাবে তোরেগেম বায়োফার্মা।
তোরেগেম বায়োফার্মার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ওসাকার কিতানো হাসপাতালের ডেন্টিস্ট্রি ও ওরাল সার্জারির প্রধান তাকাহাশি বলেন, 'শিশুর দাঁত না থাকলে তার চোয়ালের হাড়ের বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আশা করছি এই ওষুধ এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে।'
এছাড়া স্টার্টআপটি ২০২৫ সালে অ্যানোডনশিয়া-র শিকার ২ থেকে ৬ বছর বয়সি শিশুদের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পরিকল্পনা করছে। শিশু কয়েকটি অথবা সবকটি স্থায়ী দাঁত ছাড়া জন্মগ্রহণ করলে তাকে অ্যানোডনশিয়া বলা হয়। এ ট্রায়াল সফল হলে এরকম দাঁতের সমস্যায় ভোগা শিশুদের অতিপ্রয়োজনীয় সমাধান পেতে পারে।
এছাড়া ক্যাভিটির কারণে দাঁত হারানো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এ ওষুধ ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করছে স্টার্টআপটি।