মার্কিন বিচারপতি: 'প্রেসিডেন্ট এখন রাজার মতো আইনের ঊর্ধ্বে'
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আংশিক দায়মুক্তি দেওয়া নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বিতর্ক ও মতবিরোধের জন্ম দিয়েছে। বিচার থেকে আংশিক দায়মুক্তি দিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিন বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের বেঞ্চের ৬ জনই ট্রাম্পের দায়মুক্তির পক্ষে ছিলেন; বিপক্ষে ছিলেন তিনজন। খবর বিবিসি'র।
এই তিন উদারপন্থি বিচারপতি হলেন— সোনিয়া সোটোমায়োর, কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন এবং এলেনা কাগান।
বিচার থেকে কোনো ধরনের প্রেসিডেন্সিয়াল ছাড়ের স্বীকৃতি দিয়ে আদালতের এমন রায় এটিই প্রথম। রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। সেই অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধানের অধীন ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলোয় দায়মুক্তি পাবেন। তবে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি পাবেন না তিনি।
উদারপন্থি বিচারপতিরা এই রায়কে 'বিপর্যয়কর পরিণতি' এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।
বিচারপতি সোটোমায়োরের মতে, একজন রাষ্ট্রপতি এভাবে দায়মুক্তির সুযোগ পেলে তা দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। যেমন—বিচারবহির্ভূত হত্যার আদেশ দেওয়া, অভ্যুত্থান সংগঠিত করা বা ঘুষ গ্রহণ।
বিচারপতি সোটোমায়োর বলেন, 'সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট এখন একজন রাজার মতো আইনের ঊর্ধ্বে।
সাধারণত, আদালতের ভিন্নমতগুলোতে 'শ্রদ্ধাজনকভাবে' শব্দটি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে বিচারপতি সোটোমেয়র তার বক্তব্য শেষ করেছিলেন এই বলে— 'আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ভয় নিয়ে, আমি এই সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করি'।
আদালতের অপর দুই উদারপন্থি বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন ও এলেনা কাগান তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
বিচারপতি জ্যাকসন একটি পৃথক মতামতে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন এ রায়টি মৌলিক নীতিকে ক্ষুণ্ন করে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়— এই নীতি জাতিকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচারণা ব্যবস্থাপক কুয়েন্টিন ফুলকস সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি সোটোমেয়রের ভিন্নমতের প্রতিধ্বনি করেছেন তিনি বলেন, 'ইমিউন, ইমিউন, ইমিউন। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে স্বৈরশাসনের চাবি তুলে দিয়েছে মাত্র'।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস, সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে লিখেছিলেন, ভিন্নমতাবলম্বীদের এই উদ্বেগকে অতিরঞ্জিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাদের ওপর কারণ ব্যতীত ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছিলেন।
তিনি লিখেছিলেন যে উদারপন্থি বিচারপতিরা অনুমানের ভিত্তিতে ভয় দেখাচ্ছেন এবং তাদের আইনি যুক্তিকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রধান বিচারপতি যুক্তি দিয়েছিলেন— এই সিদ্ধান্তটি, রাষ্ট্রীয় কাজ বাদে কোনো অনানুষ্ঠানিক কাজের জন্য প্রেসিডেন্টের জবাবদিহিতার আইনের পরিবর্তন করে না। যদিও সমালোচকদের মতে এই রায়ের ভাষা অস্পষ্ট।
বোস্টন কলেজ ল' স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক জেফরি কোহেন বিবিসিকে বলেন, 'সরকারি কাজ হিসেবে কোনটি গণ্য হবে সে বিষয়ে রায়ে স্পষ্টভাবে বলা নেই'।
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে এই রায়টি সরকারি এবং অনানুষ্ঠানিক কাজের মধ্যে পার্থক্য বলে দিতে পারেনি— যার অর্থ হতে পারে যে রাষ্ট্রপতি যা কিছু করেন তার প্রায় সবই বিচারের হাত থেকে মুক্ত।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক লিয়াহ লিটম্যান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সাধারণত এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়, তবে এবার নয়। তিনি মনে করেন, এই রায় স্পষ্টতই প্রেসিডেন্টকে দায়মুক্তি দেওয়ার পক্ষে।
লিটম্যান বলেন, নতুন রায়ের অধীনে একটি প্রসিকিউশন কীভাবে কাজ করতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন