কাজের চাপের মাঝে হালকা ঘুমিয়ে যেভাবে নিজেকে চাঙ্গা করতে পারেন
সকালবেলা শরীরকে চাঙ্গা করতে অনেকেই কফি খেয়ে থাকেন। তবে দিন যত গড়াতে থাকে শরীর তত দুর্বল হতে থাকে। তখনও শরীরকে চাঙ্গা রাখতে ফের কফি পান করা অবশ্য কোনো সেরা সমাধান হতে পারে না। এই গবেষকরা অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল পালনের কথা বলেন।
অল্প সময় ঘুমিয়ে নিন
ঘুম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা মনোবিজ্ঞানী এবং ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেড উ দিনের মাঝে অল্প সময় ঘুমিয়ে নেওয়াকে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন। এতে করে মন চাঙ্গা হয় এবং আরও পরিস্কারভাবে চিন্তা করা যায়।
তবে চাইলেই সহজে অল্প সময় ঘুমিয়ে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করা যায় না। আপনি যদি ভার্চুয়াল অফিস করে থাকেন কিংবা অফিসে নিরিবিলি কোনো জায়গা থেকে থাকে তবে হয়ত আপনি অভ্যাসটি আয়ত্ত করতে পারবে। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনাকে কয়েকটি গুণ আয়ত্ত করতে হবে।
সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কগনিটিভ সাইন্সের অধ্যাপক সারা মেডনিক মনে করেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর অল্প সময় ঘুমিয়ে নিয়ে সবচেয়ে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে। অন্যদিকে জেড উ বেশি দেরি করে এটির অভ্যাস না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। কেননা এতে করে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারেন।
জেড উ বলেন, "বিষয়টি অনেকটা এমন যে, রাতের খাবারের আগে বেশি করে মিষ্টান্ন খেয়ে ফেলা। যা আপনার ক্ষুধা নষ্ট করে দেবে।"
কম প্রত্যাশা রাখুন
অল্প সময় ঘুমিয়ে নিতে গিয়ে হয়ত আপনার ঠিকঠাক ঘুমই আসবে না। কিংবা আপনি যে খানিকটা ঘুমিয়েছেন, সেটা অনুভবই করবেন না। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
অধ্যাপক সারা মেডনিক বলেন, "ঘুমের প্রথমদিকে আমরা অনেক সময় চেতন অবস্থায় থাকি। তবে এটাও বেশ ভালো বিশ্রাম।"
আরামে থাকুন
অল্প সময় ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্য শান্তশিষ্ট একটা জায়গা ঠিক করুন। যেখানে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা কম। একইসাথে ফোন সাইলেন্ট কিংবা এয়ারপ্লেন মোডে চালু রাখুন।
জেড উ বলেন, "ঘুমের প্রস্তুতির সময় আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের চিন্তা মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে ফেলুন। ধীর ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কথা ভাবুন। এভাবে আপনার ঘুম চলে আসবে।"
ক্যাফেইন গ্রহণ করুন
অল্পসময় ঘুমিয়ে নেবার পর কফি পান নিজেকে চাঙ্গা করতে পারে। যদিও এর সপক্ষে যে খুব বেশি স্টাডি আছে এমনটা নয়। তবে আপনার যদি রাতেও কাজের চাপ থাকে তবে তা কার্যকরী হতে পারে। নতুনা অধ্যাপক সারা মেডনিক অবশ্য এই কৌশল অবলম্বন করতে খুব একটা সায় দেননি। কেননা এতে করে পরবর্তীতে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
অল্প সময় নির্ধারণ ও অ্যালার্ম
শরীরকে চাঙ্গা করতে ২০ মিনিটের মতো ঘুমই যথেষ্ট বলে মনে করেছেন অনেক গবেষক। যেটি কার্যকরী ঘুমের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সময়। এতে করে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না বলে মনে করেন মেডনিক।
জেড উ বলেন, "২০ থেকে ৩০ মিনিটের পর ঘুম আরও গভীর হতে থাকে। তখন ঘুম থেকে ওঠা আরও কঠিন হয়ে যায়।"
পেইন বলেন, "যদি ২০ মিনিট ঘুমিয়ে নেবার পরেও আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, তবে রাতে আপনার ঠিকঠাক ঘুম হয়নি। এক্ষেত্রে সময় থাকলে আপনি ৯০ মিনিটের মতো ঘুমিয়ে নিতে পারেন, যা আরও কার্যকরী হবে।।".
তিনি আরও বলেন, "যাদের বেশি ঘুম দরকার, তাদের জন্য দিনে এমন দীর্ঘ সময়ের ঘুম কাজে লাগতে পার। যেমন খেলোয়াড়, গর্ভবতী মা কিংবা রাতে জেগে কাজ করতে হয় এমন কর্মী।"
সেক্ষেত্রে ঘুমের সময় যেটাই হোক না কেন আপনার অ্যালার্ম সেট করা উচিত। যাতে করে সঠিক সময়ে ঘুমিয়ে কাজের সময়ের আগেই উঠে পড়া যায়।
তবে অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথেই উঠে না গিয়ে নিজেকে কয়েক মিনিট সময় দেওয়া দরকার বলে মনে করে সারা মেডনিক। একইসাথে চোখে সূর্যের আলো পড়লে তা আরও কার্যকরী। কেননা এতে করে মস্তিস্কে সিগন্যাল যাবে যে, এখন উঠে গিয়ে কাজে যুক্ত হওয়ার সময় হয়েছে। এছাড়াও মুখে ও ঘাড়ে ঠান্ডা পানি দিলে তা শরীরকে চাঙ্গা করতে পারে।
ঘুম না আসলে বিশ্রাম নিন
অনেকের ক্ষেত্রে অল্প ঘুমিয়ে উঠতে গেলে তা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে তার জন্য এটি ততোটা কার্যকর হয় না বলে মনে করেন মেডনিক। সেক্ষেত্রে না ঘুমালেও মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে এমন কিছু করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সেটা হতে পারে কোনো মেডিটেশন কিংবা নির্জন জায়গায় হাঁটাহাঁটির মতো বিষয়।
ভালো ঘুমাতে করণীয়
প্রতি পাঁচ জনের চারজনই রাতে ঘুমানোর সময় সপ্তাহে অন্তত একবার বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। সেক্ষেত্রে গবেষকেরা অবশ্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে বলেছেন।
যেমন, ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন দূরে রাখতে হবে। ঘরে পরিবেশ বেশ শান্তশিষ্ট হবে। আরামদায়ক বালিশ ও ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান