আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়
প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আয়ারল্যান্ড তেমন সমীহর প্রতিপক্ষ না হলেও বাংলাদেশের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের মতো করেই আইরিশদের দেখছেন তারা। একদিন পরই অবশ্য দুই দলের ব্যবধান বোঝা গেল। প্রথমে ব্যাট হাতে শাসন করলেন সাকিব আল হাসান, অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমরা। পরে বল হাতে আইরিশদের দিক ভুলিয়ে দিলেন এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদরা। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ তুলে নিলো বিশাল এক জয়।
শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল। ৩৭ বছরে ৪০৭টি ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের এটা রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয়। রানের হিসেবে আগের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০২০ সালে সিলেটের এই মাঠেই ১ মার্চ জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানে হারিয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো না হলেও চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ার পাশাপাশি দারুণ ইনিংস খেলেন সাকিব ও ম্যাচসেরা হৃদয়। পরে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন মুশফিকুর রহিম। এই তিনজনের ব্যাটে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ, যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে এবাদত, নাসুম, তাসকিনদের বোলিং তোপের মুখে ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রানের গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা মন্দ করেনি আয়ারল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান যোগ করেন দুই ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং। কিন্তু ডোহেনিকে সাকিব ফেরাতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সফরকারীদের ইনিংস, চলতে থাকে আসা যাওয়ার মিছিল। এবাদত, নাসুম, তাসকিন, সাকিবদের বোলিংয়ের সামনে তাদের কোনো ব্যাটসম্যান সেভাবে লড়াই-ই করতে পারেনি, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় আইরিশরা।
ওপেনার ডোহেনি ৩৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্বায় ৩৪ রান করেন। ৩১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২২ রান করেন স্টার্লিং। এরপর কেবল জর্জ ডকরেল লড়াই করতে পেরেছেন। ৪৭ বলে ৬টি চারে ইনিংস সেরা ৪৫ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া কার্টিস ক্যাম্পার ১৬ ও মার্ক এডেয়ার ১৩ রান করেন। দলটির ছয়জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে ব্যর্থ হন।
সবচেয়ে বেশি ইকোনমিতে বোলিং করলেও আইরিশদের সর্বোচ্চ ভুগিয়েছেন এবাদত। ডানহাতি এই পেসার ৬.৫ ওভারে ৪২ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। ৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটাই তার সেরা বোলিং, আগেও একবার ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতা হয়ে ওঠা তাসকিন ৬ ওভারে ১৫ রানে নেন ২ উইকেট। সিলেটের ঘরের ছেলে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ৮ ওভারে ৪৩ রানে ৩টি উইকেট পান। সাকিব ৪ ওভারে ২৩ রানে নেন একটি উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে ৩১ রানে কোনো উইকেট পাননি।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ১৫ রানেই ফিরে যান অধিনায়ক তামিম ইকবাল, ৩ রান করেন তিনি। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন ২৬ এবং শান্ত ২৫ রান করে আউট হন। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরই ইনিংসের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ জুটিটি গড়েন সাকিব ও হৃদয়। সাকিব নিজের স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে চাপ কাটানোর কাজটি করেন। হৃদয়ের ব্যাটিংও ছিলো সাবলীল।
১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও হৃদয়। এর মাঝেই ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। দেশের হয়ে তামিম ইকবালের পরই এখন সাকিব। ২৩৫ ওয়ানডেতে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬৯ গড়ে ৮ হাজার ১৪৬ রান নিয়ে সবার উপরে তামিম। পরের জায়গাটি সাকিবের দখলে এলো। ২২৮তম ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন সাকিব। ৯টি সেঞ্চুরি ও ৫৩টি হাফ সেঞ্চুরি করা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং গড় ৩৭.৯৭। দেশের পক্ষে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রান পূর্ণ করা সাকিব বিশ্বের ৪৪তম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি হাতছানি দিচ্ছিল, তখনই গ্রাহাম হিউমের বলে লকান টাকারকে ক্যাচ দেন সাকিব। ৮৯ বলে ৯টি চারে ৯৩ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। সাকিবের বিদায়ের উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে হৃদয়ও আগের চেয়ে কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। দুজনে বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ করেন ৭৬ রান, খরচা করেন ৪৯ বল। ২৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করে আউট হন মুশফিক।
সাকিবের মতো সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে হতাশ হতে হয় হৃদয়কেও। অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি হওয়া থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে এসে হিউমের বলে বোল্ড হন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ৮৫ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯২ রান করেন তিনি। তার এই ইনিংসটিই ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি করা তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হৃদয়। ইনিংসটি দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন হৃদয়। অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়া বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শেষদিকে উইকেটে ছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। তাসকিন-নাসুমদের সঙ্গে নিয়ে দলের সংগ্রহ ৩০০ পার করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের পেসার হিউম ৬০ রান খচায় ৪ উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান এডেয়ার, অ্যান্ডি ম্যাকবার্নি ও ক্যাম্পার।