‘ট্রাম্প কোন পথ বেছে নেবেন তার ওপরই সব নির্ভর করছে’: মুস্তাফিজুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর নতুন করে শুল্কারোপের কথাও বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের আইনও আরো কঠোর হচ্ছে, কমতে পারে দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা। তার এসব সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বাকি বিশ্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
এর প্রভাব বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বা কেমন হবে? বিশেষত বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে। জানতে একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। তিনি হলেন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তার বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলো—
ড. মুস্তাফিজুর রহমান: শুল্কের প্রভাব কতোটা হবে তা বলা মুশকিল— কারণ সেটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সব দেশ থেকে করা আমদানির ওপরে একই হারে, ধরুন ১০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেন— তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। তবে যদি দেশভেদে শুল্ক হারে পার্থক্য থাকে সেটি কিন্তু উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প কোন পথ বেছে নেন– সেটি আগে দেখতে হবে।
ধরুন চীন থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে ৫০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করল যুক্তরাষ্ট্র, আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই হার করল ১০ শতাংশ। তখন কিন্তু আমরাই লাভবান হবো— কারণ যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানির ৯৩ শতাংশই হলো আরএমজি পণ্য। আমাদের পোশাকখাতের সাপ্লাই-সাইডে লিংকেজ খুব শক্তিশালী। ফলে আমরা সহজেই উৎপাদন বাড়াতে পারব। আমরা যেহেতু তৈরি পোশাকের বৃহৎ উপাদক— সেকারণেও আমাদের রপ্তানিকারকরা দ্রুত এই সুযোগ নিতে পারবেন।
আবার একইভাবে বলা যায়, সবাই যদি অনুমান করে ট্রাম্প চীনের ওপর আরো শুল্কারোপ করতে চলেছেন— তাহলে বাজারও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এইক্ষেত্রে একটা বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আগেই— তার আন্দাজের ভিত্তিতে বাজারে চাঞ্চল্য দেখা যাবে।
এছাড়া, সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যনীতির অংশ হিসেবে, ট্রাম্প শ্রম অধিকার ও পণ্যের মানের ক্ষেত্রে আরো উচ্চতর মানদণ্ড নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে পারেন।
স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষেত্রে কী ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার— আমরা সেগুলো নিয়ে এখন আলোচনা করছি। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন। বাংলাদেশের আসন্ন এলডিসি গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে এটিও যুক্ত হবে। এতে আমাদের রপ্তানির ওপর প্রতিযোগিতার চাপ আরো তীব্র হবে।
বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে পাওয়া সুবিধা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়— এটাও আমাদের স্মরণে রাখা দরকার। যদি আমরা ভিন্ন শুল্কহারের সুবিধা পাই— তবু আমাদের টেকসইভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বাণিজ্য যুদ্ধ মূলত ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, সুতরাং বাজারে তার প্রভাবটাও পড়বে।
তবে সবটাই নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোয় ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেন তার ওপর।