বাজেটে সংসদের ভূমিকা কতটুকু?
বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সরকারি ব্যয়ের উপর সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের যে চর্চা চলে আসছে তা আটশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে।
জনগণের অধিকার হিসেবে সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি দ্বারা সরকারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের অনুমোদন ও যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল প্রায় আড়াইশো বছর আগে হওয়া ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের একটি সফল বিপ্লব।
দক্ষতার সঙ্গে ক্ষমতার চর্চার বিষয়টি পৃথিবীর বহু দেশেই স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখেছে এবং এখনও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রমগুলোতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
যেসব দেশ সরকারের ব্যয়ের উপর দক্ষ সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির সংস্কার ও বিকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে, শাসনকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে তারা বরাবরই সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে; ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে তাদের গণতন্ত্রও।
সেসব দেশে দুর্নীতি, ঘুষ এবং জনগণের অর্থের অপচয় প্রশাসনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এরকম অস্বাভাবিক দেশ পরিচালনার কারণে আইনের শাসন তখন একটি হাস্যরসের বিষয় হয়ে যায়। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা তখন আর তাদের কাজ-কর্মের জন্য কারও কাছে দায়বদ্ধ থাকেন না। বেপরোয়াভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করে উন্নয়নের নামে কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়াই রাষ্ট্রের টাকা খরচ করতে থাকেন তারা।
১৭৫৬ থেকে ১৭৬৩ সালের মধ্যে গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যকার ঐতিহাসিক সাত বছরব্যাপী যুদ্ধের রসদ যোগাতে গিয়ে ব্রিটিশ কোষাগারে যখন টান পড়ে তখন আমেরিকান উপনিবেশগুলোতে অতিরিক্ত কর আরোপ করে ব্রিটিশ রাজ। ওই যুদ্ধে যদিও ব্রিটিশরা জিতেছিল তবে দীর্ঘ এই লড়াই চালু রাখতে দেশটির অর্থভাণ্ডার অনেকটাই ফুরিয়ে যায়। আর এই উল্টো ফলাফলের কারণেই বেগবান হয় আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন।
তবে ঋণের এই সমুদ্র থেক ব্রিটেনকে উদ্ধার করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটি ধারণা নিয়ে আসেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা। ঋণ পরিশোধ করতে আমেরিকান কলোনিগুলোর উপর একের পর শুল্ক আরোপ শুরু করে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট।
১৭৬৫ সালে ব্রিটিশরা তাদের সংসদে 'দ্য স্ট্যাম্প অ্যাক্ট' নামে যে আইনটি পাশ করে তার মাধ্যমে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে ছাপা হওয়া সবকিছুর উপরই করারোপ শুরু হয়। এর মধ্যে ছিল তাসের কার্ড, সংবাদপত্র এবং আইনি-কাগজপত্রও।
আমেরিকানরা এই আইনটির তীব্র প্রতিবাদ করে। এই আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে প্রচারের পর প্রতিবাদটি একসময় সহিংস আন্দোলনে রূপ পায়। বিক্ষোভকারীরা বাড়তি এই কর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল, যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই আইনটি পাশ হয়েছে সেখানে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই।
নিজেদের পক্ষে যুক্তি হিসেবে এ সময় আমেরিকানরা ১২১৫ সালে ব্রিটিশ রাজার স্বাক্ষরিত 'ম্যাগনা কার্টা' আইনের উদাহরণ দেয়। ওই আইনে বলা আছে যুক্তরাজ্যের 'কমন কাউন্সেল' এর অনুমোদন ছাড়া ব্রিটিশ রাজাও কর আরোপ করতে পারবেন না।
তবে এই বিক্ষোভকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা। আন্দোলনকে তোয়াক্কা না করে ১৭৬৭ সালে 'টাউনশেন্ড অ্যাক্ট' নামে আরেকটি আইন প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে রং, কাগজ, কাঁচ, সীসা এবং চা এর মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উপর কর আরোপ করে ব্রিটিশরা।
তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে মনে হয়েছিল এই কর আরোপ নায্য কারণ এই উপনিবেশগুলোর পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েই তাদের রাজকোষ খালি করতে হয়েছিল। তবে আমেরিকানরা তা মেনে নেয়নি। তারা সহিংস আন্দোলন শুরু করে।
কর আদায়ের লক্ষ্যে ব্রিটিশদের বানানো এই দুটি আইন ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিপ্লবকে আরও জোরালো করেছিল। যার ফলাফল হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কোনো ধরনের কর আরোপ নয়- সময়ের পালাবদলে এই ধারণাটি আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বহু গণতান্ত্রিক দেশ এমনকি বাংলাদেশও গ্রহণ করে।
বাংলাদেশে অনুসৃত প্রক্রিয়া
আগামী এক বছর দেশের কোন খাত থেকে কীভাবে আয়-ব্যয় হবে তা জানাতে আগামীকাল সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট উপস্থাপনের পর তা পাশ করার জন্য তিনি যখন সংসদের কাছে অনুমোদন চাইবেন তখন সরকারের বার্ষিক ব্যয় অনুমোদন ও যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে জনগণের যে অধিকার সেটির প্রতিফলন ঘটবে জনগণের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো এবং বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রীদের মতো আ হ ম মুস্তফা কামালও আগামী এক বছর দেশের রাজস্ব আয় ও তা ব্যয়ের বিষয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা ব্যাখ্যা করবেন সংসদে। এরপর তার পুরো পরিকল্পনার অনুমোদন দেবে সংসদ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৮৩ নম্বর অনুচ্ছেদে কর আরোপের বিষয়ে যে আইনের কথা বলা হয়েছে সেটি এই ভুখণ্ডের জনগণের স্বার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে। সেখানে বলা হয়েছে, "সংসদের কোন আইনের দ্বারা বা কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন কর আরোপ বা সংগ্রহ করা যাইবে না।" বিশ্বের যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে সংসদ গঠন করা হয় এবং ওই প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষ হয়েই কথা বলেন।
সুতরাং, রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের হিসাবের উপর ভিত্তি করে দেওয়া বাজেটের মাধ্যমে প্রত্যেক অর্থমন্ত্রীই তার দেশের জনগণের মনে জায়গা করে নিতে চান।
বাজেটের এই বিবরণ বলে দেয়, প্রত্যেক রাষ্ট্র কোথায় তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। সে কি তার দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের অগ্রাধিকার দেবে নাকি দেবে না সেটি বলে দেয় এই বাজেট।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাতে অনেক বেশি রাজনৈতিক বিবেচনা থাকে। ক্ষমতায় থাকা দলটিকে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থের বরাদ্দ দিতে হয়।
একটি আদর্শ গণতন্ত্রের দেশে জনগণের প্রতিনিধিরা ওই বাজেট প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করেন এবং তাতে যদি জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো পরিকল্পনা খুঁজে পান, তবে তা পরিবর্তন করার প্রস্তাব দেন।
এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের আইন প্রণেতাদের দায়িত্ব অনেক বেশি, কারণ তাদের সুশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যের সঙ্গে মিল রেখে দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঠিক থাকছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হয়।
তারপরে তারা এটিকে অনুমোদন দেন। সুতরাং, পরোক্ষ গণতন্ত্রে সরকারের বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়।
সুতরাং সংসদে একটি ভালো বাজেট অনুমোদন করার বিষয়টি মূলত আইন প্রণেতাদের দক্ষতা এবং সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে। ভালো বাজেট প্রস্তাব তৈরি ও এর সময়োপযোগী ও দক্ষ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আমলাতন্ত্রের উপর চাপ তৈরি করে সংসদীয় কার্যক্রমের দক্ষতা।
সংসদ এবং কয়েক ডজন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যদি দক্ষ না হয় তাহলে রাষ্ট্রের ব্যয় এবং বাজেট কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থতার দায়ে সরকারকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাতে পারে না তারা।
আদর্শ গণতন্ত্রগুলোতে সরকারি ব্যয়ের উপর সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের যে অনুশীলন তা প্রতিফলিত হয় না বাংলাদেশে।
বাস্তবতা
২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১২ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট দিয়েছিলেন তাতে প্রথমবারের মতো একটি স্লোগান যোগ করেছিলেন তিনি। তার বাজেট বক্তব্যের কাভার পেইজে লেখা ছিল, 'আগামীর পথে অভিযাত্রা: একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকামী দেশ গড়ার লক্ষ্যে'।
তার পর থেকে প্রতি বছর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় স্লোগানে কিছু আশাবাদী শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে 'সমৃদ্ধি' শব্দটি কমপক্ষে চারটি বাজেটের বক্তৃতায় ব্যবহার করা হয়েছে।
মহামারির কারণে সৃষ্ট বাস্তবতা অবশ্য আলাদা চিত্র দেখায়। ২০১২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার স্লোগানে ব্যবহৃত 'কল্যাণকামী বাংলাদেশ' তেমন আর দেখা যাচ্ছে না। 'সমৃদ্ধি'ও তেমন উজ্জ্বল না। একের পর এক করে ১০টি বাজেট একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকামী বাংলাদেশ গঠনে কতটুকু অবদান রেখেছে?
সংকটের সময়ে মানুষ যখন বিপদে পড়েন তখন একটি রাষ্ট্রের ভূমিকা দেখলেই বোঝা যায় সেটি কল্যাণকামী নাকি অন্যকিছু। মহামারির কারণে চাকরি হারিয়ে, নিজেদের জীবিকা হারিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে মানুষ যখন গতবছর রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গিয়েছিল তখন তাদের দুর্ভোগ হ্রাসে দৃঢ় এবং কার্যকরী তেমন কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি রাষ্ট্রকে।
বিভিন্ন সেবা খাতের সঙ্গে জড়িত কয়েক মিলিয়ন মানুষ মহামারির কারণে দেওয়া লকডাউনের কারণে যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তা পুনরুদ্ধারের জন্য এখনো লড়াই করছেন। কর্তৃপক্ষের অর্থ ও খাদ্যশস্যের ঘাটতি ছিল না, তবে বিতরণে দক্ষতার অভাব ছিল। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। যখন অর্থের অভাবে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে তখন তাদের জন্য প্রণোদনা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেটির বিতরণ হচ্ছে না।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং জনগণকে চিকিত্সা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে অদক্ষ সেটি মহামারিকালে এসে প্রমাণিত হয়েছে। চলতি বছরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও একটি আইসিইউর জন্য ও হাসপাতালে একটি শয্যার জন্য মানুষ যেভাবে হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করেছে তা স্বাস্থ্যখাতের দুর্দশাকেই তুলে ধরে। এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতের লোকজন দ্বারা জনগণের অর্থ লুট করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতের বেহাল দশার মূল্য দিতে হচ্ছে শিশুদের। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা হল, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে এই ভাইরাসটি বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং এটি দ্রুত ছড়িয়ে দেবে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আরও চাপ তৈরি হবে।
স্কুলগুলোকে তালাবদ্ধ করে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। তবে এটি ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ বড় 'ডিজিটাল বিভাজন' দিকটি প্রকাশ করেছে।
এটি কি একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের চিত্র? 'সমৃদ্ধ' শব্দটির কী হবে? সমৃদ্ধ মানে হল উপাদানে সফল; আর্থিকভাবে বিকশিত; সম্পদ এবং সাফল্য আনয়ন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়, তখন কোনো দেশকেই 'সমৃদ্ধ' বলা যায় না।
গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে এটি একটি 'বেকার প্রবৃদ্ধি'তে পরিণত হয়েছে। বৈষম্য বৃদ্ধির ফলে জনগণ প্রবৃদ্ধির সমান সুবিধা পায়নি এখানে। উদ্বেগজনকভাবে ব্যয়বৃদ্ধির মাধ্যমে মেগা প্রকল্পগুলি কার্যকর করা হচ্ছে। জনগণের অর্থের এই অপব্যবহারের জন্য কেউ দায়বদ্ধ নয় এখানে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় পর্যবেক্ষণ করার জন্য সাংবিধানিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংসদকে। তবে এটি তার মৌলিক দায়িত্ব পালনে অদক্ষতা প্রদর্শন করেছে।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সংসদীয় কার্যক্রমের এই নিম্নমানের জন্য প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই দায়ী করছেন।
সাংসদরা তাদের দলীয় মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত হন। ক্ষমতাসীন দলের সাংসদরা সব বাজেট প্রস্তাবকে অন্ধভাবে সমর্থন দেন এবং অনেক উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে প্রশাসনের ব্যর্থতা সম্পর্কে তেমন কথা বলেন না তারা। সরকারি প্রকল্পের অযৌক্তিক বিলম্ব এবং ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে খুব কম আলোচনা করেন তারা। অন্যদিকে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা পুরো বাজেটের তীব্র বিরোধিতা করেন। তবে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই দুই নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে।
বাজেট অধিবেশন ছাড়াও মন্ত্রীসভায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে বছরজুড়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার কথা রয়েছে সংসদ সদস্যদের। তবে এই কমিটিগুলো খুব একটা কার্যকরী নয়। কারণ ওইসব কমিটির প্রধান কিংবা সদস্য হিসেবে থাকা সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের দোষ-ত্রুটি, টাকার অপব্যয়, কিংবা দুর্নীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করে মন্ত্রীদের অখুশি করতে চান না।
একটি আদর্শ গণতন্ত্রে সংসদীয় চর্চাগুলো সামগ্রিক শাসনব্যবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বাংলাদেশে পরিস্থিতি আলাদা। ক্ষমতায় থাকা দলের প্রতিশ্রুতি এবং তাদের কাজকর্মের বাস্তবতার মধ্যে এখানে ব্যবধান অনেক।
চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে দেশের বার্ষিক বাজেটে সংসদীয় অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি বর্তমানে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। এটি তখনই হয়, যখন বাজেটের বিষয়ে নিজেদের ভূমিকার কথা ভুলে যান সংসদ সদস্যরা।
- লেখক: উপ-নির্বাহী সম্পাদক, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
- মূল লেখা ইংরেজিতে পড়ুন: How critical is the Parliament's role in budget discipline?
- বাংলায় অনুবাদ: তারেক হাসান নির্ঝর