খাদ্য অপচয় বিরোধী বার্তা দিতে ১,০০০টি সোনার ভাতের দানা নষ্ট করলেন চীনা শিল্পী
আপনি যদি শীঘ্রই চীনের সাংহাই শহরে বেড়াতে যান, তাহলে এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আপনার সামনে। হয়তো দেখা যাবে হয়তো রাস্তার পাশের ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন, কিংবা খোলা মাঠের ঘাসের উপর বসে অলস দুপুর কাটাচ্ছেন, এমন সময় আপনার সামনে পড়ল খুব ছোট্ট একটি সোনার ভাতের দানা, যার মূল্য নেহাত কম নয়।
ভাবছেন কীভাবে সম্ভব হবে এমন কিছু?
কারণ, এর নেপথ্যে রয়েছেন সাংহাই ভিত্তিক শিল্পী ইয়াং ইয়েক্সিনের অবদান।
গত ১৩ অক্টোবর এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটান ইয়াং। বর্তমান সময়ের খাদ্য অপচয়ের উপর আলোকপাত করতে খাঁটি সোনার তৈরি ১,০০০টি ভাতের দানা তিনি এক এক করে ফেলে দেন ময়লা ফেলার ঝুড়ি, ড্রেন, ঘাস, এমনকি হুয়াংপু নদীর পানিতে।
এভাবে বিশ্ববাসীকে একটি জোরালো বার্তা দেওয়া ছিল তার উদ্দেশ্য। তাই নিজের এমন পাগলামি কাণ্ডের ভিডিও তিনি অনলাইনে আপলোড করেন, এবং অনুমিতভাবেই, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেটি।
ভিডিওতে যে ভাতের দানাগুলো দেখা গেছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ৫০০ গ্রাম সোনা দিয়ে। এই পরিমাণ সোনার দাম ২ লাখ ইউয়ান বা ৩১,০০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকারও বেশি! একটি জুয়েলারি স্টোর থেকে সত্যিকারের ভাতের দানার পরিমাপের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয় সোনার ভাতের দানাগুলো।
তবে শিল্পের মাধ্যমে একটি 'মহৎ বার্তা' ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও, পূরণ হয়নি ইয়াংয়ের সেই মনোবাসনা। অধিকাংশ দর্শকই তার সেই বার্তাকে কোনো গুরুত্ব তো দেয়ইনি, বরং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে 'ভুয়া শিল্প' সৃষ্টির।
দর্শকদের মূল আপত্তির জায়গা হলো বিপুল পরিমাণ অর্থমূল্যের সোনার অপচয়। খাদ্যের অপচয়কে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে সোনার অপচয়ের কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পাচ্ছে না তার।
এক ব্যক্তি চীনা মাইক্রোব্লগিং সাইট ওয়েইবোতে লিখেছেন, "সোনা কেন? আমার তো মনে হচ্ছে, দম্ভপূর্ণ শো অফের মাধ্যমে খাদ্য অপচয়ের ব্যাপারটিকে তিনি কৌতুকে পরিণত করেছেন।"
আরেকজন লিখেছেন, "এসব করার চেয়ে ভালো হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এলাকাগুলোয় গিয়ে সাহায্য করা, সেইসব কৃষকের জন্য অর্থ ব্যয় করা যারা বন্যার কারণে তাদের ফসল হারিয়েছে।"
এত সমালোচনার পরও নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একচুলও সরছেন না ইয়াং। তিনি বিশ্বাস করেন, ১০০০টি সোনার তৈরি ভাতের দানা ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।
"আমার অপচয়ের দৃষ্টান্তটি যদি চরম আকারের কিছু না হতো, তাহলে কেউই অপচয়ের বিষয়টিকে খুব একটা আমলে নিত না," তিনি ব্যাখ্যা করেন।
"খাদ্য ফেলে দেওয়া সোনা ফেলে দেওয়ার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সোনা হলো পৃথিবীর মাটির অংশ, এবং রান্না করা ভাত ফেলে দিলেও তা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
"প্রথমত, আমার মনে হয় মানুষজন সোনা খুব বেশি ভালোবাসে। তাই আমি যখন সোনা ছুড়ে ফেললাম, সবাই প্রতিক্রিয়া দেখাল। কিন্তু আমি যদি সত্যিকারের কোনো খাদ্য ছুড়ে ফেলতাম, কেউ ভ্রুক্ষেপই করত না।"
সাধারণ মানুষ ইয়াংয়ের কাজের সমালোচনা করলেও, চীনের শিল্প পরিমণ্ডলের মানুষজন এগিয়ে এসেছে তার সাফাই গাইতে। তাদের মতে, সমালোচনা করতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ ইয়াংয়ের বার্তার মূল অংশটিকেই ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইয়াং বলেন, "আমার মনে হয় আমার বিরুদ্ধে আসা মন্তব্যগুলো খুবই সংকীর্ণমনা ও পক্ষপাতদুষ্ট। যেমন ধরুন, আমি যখন ৫০০ গ্রাম সোনা বা ২ লাখ ইউয়ান একটি দাতা সংস্থায় দান করলাম, আমি তখন কেবল একটি দাতা সংস্থাকেই সাহায্য করলাম, এবং এর মাধ্যমে ২ লাখ ইউয়ানের সমমানের জিনিসই উৎপাদনে ভূমিকা রাখলাম। এতে করে আমার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া মানুষের পরিমাণ কিন্তু খুবই সীমিত। কিন্তু আমি যদি ৫০০ গ্রাম সোনা বা ২ লাখ ইউয়ানকে একটি পাবলিক ইভেন্টে পরিণত করি, কত মানুষ সেটি দ্বারা প্রভাবিত হয়?"
- সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল