পানির নিচে নিমজ্জিত ২৪০০ বছর পুরনো ফলভর্তি ঝুড়ি এখনো অক্ষত!
মিশরের আবু কির উপসাগরে নিমজ্জিত প্রাচীন মহানগরী, থনিস-হেরাক্লিয়ন নিয়ে গবেষণা করার সময় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের এক ফলের ঝুড়ি খুঁজে পে য়েছেন গবেষকরা। আর সবচেয়ে অবিশ্বাস্য খবর হলো, সেই ঝুড়িতে থাকা ফল এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে!
ঝুড়িটির মধ্যে পাওয়া গেছে ডুম বাদাম, যা আসলে এক ধরনের আফ্রিকান পাম ট্রি জাতীয় গাছের ফল। প্রাচীন মিশরীয়রা একে পবিত্র বলে গণ্য করতো। সেইসঙ্গে আরও পাওয়া গেছে আঙুরের বীজ।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্র্যাংক গোডিও জানান, ঝুড়ির মধ্যে থাকা কোনো কিছুই নষ্ট হয়নি। বলাই বাহুল্য যে, ২৪০০ বছর পুরনো এক ঝুড়িতে অক্ষত ফল দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছেন গবেষকরাও।
গোডিও এবং ইউরোপিয়ান ইন্সটিটিউট ফর আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজি'র তার সহকর্মীরা মিশরের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রে পরিচালিত গবেষণায় পানির নিচে থাকা কন্টেইনারগুলো উদ্ধার করেছেন। ২০০১ সালে প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর নগরী থনিস-হেরাক্লিয়ন পুনরায় আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই গবেষকরা তা নিয়ে নানা জরিপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ইজিপ্ট ইন্ডিপেনডেন্ট।
মাটির নিচের একটি কক্ষে পাওয়া গেছে এই ঝুড়িগুলো। গ্রিক সিটি টাইমস এর তথ্য অনুযায়ী, সম্ভবত ফলগুলো মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়েছিল। ঝুড়িগুলোর পাশেই একটি ১৯৭/২৬ ফুটের 'টুমুলাস' পাওয়া যায় (কবরের মতো এক প্রকার টিলা এবং শেষকৃত্যের কাজে ব্যবহৃত হয়), এমনই অনেক গ্রিক উপকরণও পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব দ্রব্য সে অঞ্চলে বসবাসরত গ্রিক বণিক ও মার্সেনারিরা ফেলে রেখে গিয়েছিল।
গোডিও বলেন, 'সব জায়গায়ই আমরা পোড়া জিনিসপত্র দেখতে পাচ্ছিলাম। কোনো এক বিশেষ অনুষ্ঠান তো সেখানে হয়েছেই। শত শত বছর ধরে এই জায়গা বদ্ধ অবস্থায় ছিল বলা যায়, যেহেতু আমরা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের গোড়ার দিকের পর থেকে কোনো বস্তু এখানে পাইনি। তবে শহরটি কিন্তু এর পরও কয়েক শত বছর টিকে ছিল।'
টুমুলাসের আশেপাশে পাওয়া অন্যান্য দ্রব্যের মধ্যে ছিল প্রাচীন তৈজসপত্র, ব্রোঞ্জের তৈরি বিভিন্ন নিদর্শন এবং মিশরীয় দেবতা ওসিরিসকে চিত্রায়িত করে বানানো মূর্তি।
দ্য গার্ডিয়ানকে গোডিও বলেন, 'আমরা অসংখ্য সিরামিকের জিনিসপত্র পেয়েছি। একটার উপরে আরেকটা রাখা অবস্থায়…এগুলো আসলে আমদানিকৃত সিরামিক ছিল।'
থনিস হেরাক্লিয়ন শহরের গোড়াপত্তন হয় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ এ আলেক্সান্দ্রিয়া প্রতিষ্ঠার পূর্বেই থনিস-হেরাক্লিয়নের বন্দর ছিল গ্রিস অঞ্চল থেকে আগত সব জাহাজের প্রবেশপথ। ষষ্ঠ ও চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই বন্দর নগরী ছিল সবচেয়ে জমজমাট। মূল একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে চারপাশে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন ভবন; শহরের খালগুলো শহরের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করেছিল। থনিস-হেরাক্লিয়নের কেন্দ্রীয় অংশের পাশেই দ্বীপগুলোর উপরে গড়ে উঠেছিল সাধারণ নাগরিকদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় অবকাঠামোগুলো।
একসময় জলপথে বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হেরাক্লিয়ন নগরী খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে ভূমধ্যসাগরের পানিতে তলিয়ে যায়। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে এবং ভঙ্গুর পলিমাটি থাকায় এই নগরী সহজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পানির নিচে নিমজ্জিত হয়।
উপরে পলিমাটির গভীর স্তর থাকার কারণে থনিস হেরাক্লিয়ন থেকে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এর আগে থনিস-হেরাক্লিয়ন থেকে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ছিল ৭০০ প্রাচীন নোঙ্গর, স্বর্ণমুদ্রা ও ওজন বাটখারা এবং মমিকৃত প্রাণিসহ কয়েক ডজন লাইমস্টোন। গত মাসে প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরে ভিন্ন এক অংশ থেকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের একটি সামরিক জাহাজ খুঁজে পেয়েছেন এবং সেটিও প্রায় অক্ষতই ছিল। ভবিষ্যতে উক্ত অঞ্চল থেকে আরও নিদর্শন উদ্ধারের প্রত্যাশা করছেন গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন