বিয়ের প্রথা যেভাবে ভাঙলেন ভারতীয় কনে!
বিয়েতে প্যান্ট-স্যুট পরে প্রথা ভাঙলেন ভারতীয় এক নারী। বিয়ের দিন নীলাভ ছাই রঙের প্যান্ট-স্যুট পরিহিত তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তোলে। এই নারীর নাম সানজানা রিশি (২৯)। পেশায় একজন ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা তিনি।
পশ্চিমের দেশগুলোতে গাউনের পাশাপাশি প্যান্ট-স্যুটের প্রচলন গত কয়েক বছর ধরেই চলে এসেছে। পোশাক ডিজাইনাররাও তাদের সংগ্রহে প্যান্ট-স্যুট রাখছেন আজকাল। সেলিব্রিটিরাও নতুন ফ্যাশনটি পছন্দ করছেন বেশ।
সম্প্রতি, 'গেম অব থ্রোন্সে'র অভিনেত্রী সোফি টার্নারকেও তার বিয়ের দিন একটি সাদা ট্রাউজার পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়।
একটি ব্রাইডাল ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক নুপুর মেহতা বলেন, ভারতীয় নারীরা বিয়ের দিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি বা লেহেঙ্গা পরতে বেশি পছন্দ করে, সেখানে সানজানার এই ধারণাটি একেবারেই নতুন এবং তাকে সত্যিই অসাধারণ লাগছিল এ পোশাকে!
সানজানার বর ধ্রুব মহাজন জানান, বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জানতেন না তার স্ত্রী কী পরতে যাচ্ছেন বিয়েতে। তিনি বলেন, 'তাকে এতই দারুণ লাগছিল, আমি প্রথমে খেয়ালই করিনি সে প্যান্ট-স্যুট পরেছে!'
এই পোশাক বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে সানজানা বলেন, 'আমার কাছে সবসময়ই প্যান্ট-স্যুটকে খুব বলিষ্ঠ পোশাক বলে মনে হয়। আমি আমেরিকাতে সবসময়ই এই পোশাক পরতাম।'
সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি আপলোড দেওয়ার পর বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি পর্যন্ত সবাই তার রুচির প্রশংসা করেছেন। তবে নিন্দাও শুনতে হয়েছে তাকে।
ভারতীয় উপমহাদেশে মেয়েদের প্রচলিত পোশাক শাড়ি। বর্তমানে কিছুটা পাশ্চাত্য ধারা চলে এলেও যেকোনো অনুষ্ঠানে নারীরা শাড়ি পরতেই সাধারণত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর নিজের বিয়ে হলে তো শাড়ি-লেহেঙ্গা ছাড়া ভাবাই যায় না!
শুধু তাই নয়, পোশাকের রঙটাও হতে হয় যেন লাল। যদিও রঙের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র্য আজকাল দেখা যায়। কিন্তু শাড়ি-লেহেঙ্গার বদলে প্যান্ট-স্যুট যেন ভারতীয় সংস্কৃতিতে অকল্পনীয় একটি বিষয়।
প্রশংসার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তাকে নিয়ে হচ্ছে অনেক নোংরা আলোচনা। তার এই ব্যতিক্রমী রুচি মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তারা মনে করছেন, নিজ সংস্কৃতিতে পশ্চিমা ধারার অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছেন এই সানজানা। অন্য নারীদেরও উসকে দিচ্ছেন নারীবাদের নামে যা খুশি করার।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সবসময় নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। নারীর সকল কাজের নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন পুরুষেরা। তাই সানজানা মনে করেন, প্রথা ভাঙার এই আচরণ দেখে অন্য নারীরা শিক্ষা নেবেন। নারী কী পরবেন, কী করবেন, সেই সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নেবেন। নিজের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ থাকতে হবে সবসময়। তাতে সমাজ বা পরিবার যা-ই বলুক!
- সূত্র: বিবিসি