মৌমাছির কাণ্ড: ভীমরুলের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মৌচাকে মলের প্রলেপ!
এশীয় বৃহদাকার ভীমরুল বা ভ্রমর এবং তাদের স্বজাতি এশীয় ভীমরুল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি মৌমাছির চাক পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে। আপনি যদি ভীমরুলের দলবেঁধে মৌচাক আক্রমণ করা ও মৌমাছি মেরে ফেলার দৃশ্য কোনো ভিডিওতে দেখে থাকেন, তাহলে সহজেই বুঝে যাবেন, নিরীহ মৌমাছিগুলোর পক্ষে আত্মরক্ষা করা কতটা কঠিন!
চিন্তার বিষয় হলো, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে মৌমাছিরা এসব দৈত্যাকার ভীমরুলের আক্রমণ থেকে নিজেদের ডেরা বাঁচাবার কোনো উপায়ই বের করতে পারেনি।
কিন্তু তাদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পূর্ব এশিয়াতে ভীমরুলদের পক্ষে মৌচাকে আক্রমণের কাজটি অতটা সহজ নয়। জাপানে হাজার বছর ধরে মৌমাছি ও অতিকায় ভীমরুল পাশাপাশি টিকে আছে। ভীমরুলগুলো আগে মৌচাকে ঢুকে মৌমাছি মেরে ফেলত। কিন্তু এসাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছিরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে এক নতুন পন্থা অবলম্বন করেছে। তা হলো, মৌমাছিরা নিজেদের চাকে ঢোকার প্রবেশ পথে মল দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ক্যাথেরিন জে. ইয়্যুর করা এক প্রতিবেদনে এই অদ্ভুত তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেন ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজের হিথার মাতিলা। দ্য গার্ডিয়ানের ডেমিয়ান ক্যারিংটনকে তিনি বলেন, মৌমাছিগুলোর 'নিজেদের চাকে মল ব্যবহার করা দেখে আমি রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছি। কারণ বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার সুখ্যাতি আছে এই পতঙ্গের। ওদের রয়েছে উষ্ণ, আর্দ্র ও স্থায়ী বাসস্থান, যেখানে সহজেই রোগজীবাণু জন্মাতে পারে এবং ওদের ডেরা খাদ্য ও মৌমাছির বাচ্চায় পরিপূর্ণ থাকে।'
পিএলওএস জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকরা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মৌমাছিরা নিজেদের চাকের বাইরে প্রবেশপথে পাখি ও মহিষের মল লেপে রাখে। মৌচাকের সদস্যরা উড়ে উড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মল মুখে করে নিয়ে আসে। তারপর ওরা এগুলো চাকের বাইরের কয়েকটি জায়গায় লাগিয়ে দেয়।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, যেসব জায়গায় মলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, সেই জায়গাগুলো দিয়ে ভীমরুল কোনোমতেই ঢুকতে পারে না।
মৌমাছির এই কৌশল আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা মধ্যযুগীয় মনে হলেও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে মাতিলা জানান, এটিই হতে পারে এই পতঙ্গের আত্মরক্ষার জন্যে ব্যবহৃত এক দারুণ অস্ত্র।
মৌমাছিদের এই দুর্গন্ধযুক্ত গৃহসজ্জার উপকরণে ঠিক কী কী রয়েছে, সে ব্যাপারে গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন। তবে মাতিলার মতে, এই মলের মধ্যে এমন কোনো জৈব মিশ্রণ রয়েছে যার গন্ধ ভীমরুলের জন্য বিরক্তিকর এবং এর ফলে ওরা বিরক্ত হয়ে চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি অনুমান হলো, এই দুর্গন্ধ আসলে মৌচাকের আসল আকর্ষণীয় গন্ধটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, ফলে ভীমরুল আর সেদিকে যায় না।
মৌমাছির এই কৌশল কতটুকু কার্যকর, তা গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন। ভীমরুল অর্ধেকেরও কম সময় মৌচাকের প্রবেশপথের এই দুর্গন্ধযুক্ত জায়গায় এবং ৯৪ শতাংশ সময় ওরা চাকের বাইরে দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, মৌচাক চিহ্নিত করার জন্য ভিমরুল ব্যবহার করে, এমন গন্ধ যখনই তারা (গবেষক) ব্যবহার করেছেন, তখনই মৌমাছি নতুন করে মলের প্রলেপ দিয়ে দেয় প্রবেশপথে।
গবেষকরা মনে করছেন, মৌমাছির এ ধরনের আচরণ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভূটান, নেপাল ও চীনের কিছু জায়গায় দেখা যায়।
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান