ভারতে নতুন বছরের উদযাপনে পিৎজা ও বিরিয়ানি ছিল অর্ডারের শীর্ষে
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ ও আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২৩ সালকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। আর এ উদযাপনে পিছিয়ে নেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারত। দেশটিতে বর্ণালী সব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়েছে নতুন বছরের নানা অনুষ্ঠান। পারিবারিক থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায়ের এই অনুষ্ঠানগুলোর জন্য গ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ খাবারও অর্ডার করেছেন। ভারতের ফুড ডেলিভারির বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা যায়, নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে রেকর্ড পরিমাণ খাবার সরবারাহ করেছে তারা। খবর মানি কন্ট্রোল ডটকমের।
ভারতের খাবার অর্ডার করার অন্যতম কোম্পানি- 'সুইগি' গত ৩১ ডিসেম্বরে সন্ধ্যা ৬.২৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ খাবারের অর্ডার পেয়েছে। অর্ডারকৃত খাবারগুলোর মধ্যে বিরিয়ানি, পিৎজা, কেক, বার্গার ও দোসা সবচেয়ে বেশিবার অর্ডার করা হয়েছে। ঐদিন একক খাবার হিসেবে কোম্পানিটির পিৎজা ও বিরিয়ানির মোট অর্ডার সংখ্যাও চমকে দেওয়ার মত। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০.২৫টা নাগাদ, সুইগি মোট ৬১,২৮৭টি পিৎজা এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার বিরিয়ানির পার্সেল ডেলিভারি করেছে।
সুইগি-তে ৩১ ডিসেম্বর প্রায় ১ লাখেরও বেশি নতুন রেস্টুরেন্ট ডেলিভারিতে অংশ নিয়েছিল এবং সবচেয়ে ব্যস্ত মুহূর্তেও রেস্টুরেন্টগুলো ডেলিভারি দিতে পেরেছিল। প্লাটফর্মটিতে দেশের প্রতিটি শহর থেকেই খাবারের অর্ডারের চাপ ছিল প্রচণ্ড। তবে একক শহর হিসেবে বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, মুম্বাই ও দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি খাবার অর্ডার করা হয়েছে। যেহেতু প্ল্যাটফর্মটিতে বিরিয়ানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তাই দিনটিকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র হায়দ্রাবাদের বাবুর্চি রেস্টুরেন্টই প্রায় ১৫ হাজার কেজি বিরিয়ানি তৈরি করেছিল।
ফুড ডেলিভারির আরেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান- 'জোমাটো' এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দেপিন্দার গয়ালের টুইট থেকে জানা যায়, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকেও ৩১ ডিসেম্বরে সন্ধ্যা ৬.৪২ পর্যন্ত বিরিয়ানির মোট ১৬,৫১৪টি অর্ডার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও 'বিরিয়ানি বাই কিলো' নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন বছর উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২ কোটি রুপির বিরিয়ানি ও কাবাব বিক্রি করেছে।
একই চিত্র পাওয়া যায় ভারতের আরেক ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান কিউর ফুডসের ডেলিভারির ক্ষেত্রেও। প্রতিষ্ঠানটি ইটফিট, জুনোস পিৎজা, ইয়ামলেন, নোমাড পিৎজার মতো ব্র্যান্ডের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আঙ্কিত নাগোরি জানান, শুধু ৩১ ডিসেম্বরেই তারা মোট ৭০ হাজার পার্সেল ডেলিভারি করেছেন। এছাড়াও ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১১ লাখ অর্ডার গ্রহণ করে। নাগোরি বলেন, "ডিসেম্বরে কিউরফুডস সবচেয়ে বেশি অর্ডার পেয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে। নতুন বছরে আমরা প্রতি মাসে ২০ লাখ অর্ডারের মাইলফলকে পৌঁছানোর সুযোগ দেখছি।"
আরেক ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ইটক্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্মেও সবচেয়ে বেশি অর্ডার করা হয়েছে পিৎজা ও বিরিয়ানি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আনশুল গুপ্তা বলেন, "করোনার কারণে গত দুই বছর নতুন বছরের উদযাপন একটু ভিন্নভাবে হয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষ কোথাও ঘুরতে না যেয়ে বাসায় থেকেই উদযাপন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। তাই করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মত সবকিছু লাগছে।"
ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান 'ওয়াও! মমো' এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন বছরের উদযাপন উপলক্ষে গত বছরের তুলনায় এ বছরে তাদের বিক্রি প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও সাগর দারয়ানি বলেন, "বড়দিন, থার্টি ফাস্ট নাইট ও নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা খুব ভালো ব্যবসা করেছি। ২০১৫ সালে যখন কোম্পানিটি শুরু করি, তখন এক মাসে আমরা যে পরিমাণ অর্ডার পেতাম, এখন সেই পরিমাণ অর্ডার আমরা এই একদিনে পাচ্ছি।"
নতুন বছরের উদযাপন উপলক্ষে শুধু বিরিয়ানি, পিৎজা কিংবা কাবাবের মত খাবারই নয়, বরং পানি, সোডা, চিপস ও কোমল পানীয়ের মত হালকা খাবারও অর্ডার হয়েছে প্রচুর। সুইগি ইনস্টামার্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন বছরের উদযাপন উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ১ লাখ ৭৬ হাজার চিপস, ১৩,৯৮৪ প্যাকেট নাচোস ও ১৪.৮৯০ বোতল সোডা সরবারাহ করেছে। এছাড়াও জোমাটোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দিল্লীতে অর্ডারকৃত প্রতি তিনটি অর্ডারের মধ্যে গড়ে একটিতে কোল্ড ড্রিংকস কমন ছিল।