শ্যাম্পুর বোতলও হতে পারে আপনার মোটা হওয়ার কারণ!
অনেকের কাছেই হয়তো ব্যাপারটা শুনতে অবাক লাগবে। কিন্তু সত্যি সত্যিই এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে যে সামান্য শ্যাম্পুর বোতলও হয়ে উঠতে পারে ব্যবহারকারীর মোটা হওয়ার কারণ।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি।
গবেষণাটি থেকে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন পানীয়ের বোতল, রান্নাঘরের স্পন্জ ও হেয়ার কন্ডিশনারের বোতলে এমন ১১টি রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন, যেগুলো আমাদের মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করে ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা ৩৪টি ভিন্ন ভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্য খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন যে সেগুলোতে কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে।
ওইসব দ্রব্যে তারা সব মিলিয়ে ৫৫,০০০টি পৃথক রাসায়নিক উপাদানের হদিস পেয়েছেন, এবং ৬২৯ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে ১১টি রাসায়নিক পদার্থ মেটাবলিজম-ব্যাহতকারী বলে পরিচিত।
"আমাদের পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ প্লাস্টিক দ্রব্যগুলোতে এমন কিছু উপাদানের মিশ্রণ দেখা যায়, যেগুলো ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার পেছনে একটি প্রাসঙ্গিক অথচ চোখ এড়িয়ে যাওয়া ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে," বলেন নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক মার্টিন ওয়্যাগনার।
দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করে এসেছেন যে অধিকাংশ প্লাস্টিক রাসায়নিকই এ ধরনের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যে থাকে। কিন্তু ওয়্যাগনারের দল দেখিয়েছেন যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই এদের একটি বড় অংশের শোধন হয়ে যায়। ফলে রাসায়নিকগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
ইতঃপূর্বেও বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কিছু কিছু প্লাস্টিক এন্ডোক্রিন-ব্যাহতকারী রাসায়নিক ধারণ করে। ওইসব রাসায়নিককে বলা হয় 'ওবেসোজেনস', যা আমাদের শারীরিক বিকাশ ও সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ওইসব রাসায়নিককে দায়ী করা যেতে পারে ওজন বৃদ্ধির কারণ হিসেবেও।
কেননা সাম্প্রতিক গবেষণার ল্যাবরেটরি এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ প্লাস্টিক দ্রব্যই শরীরে ফ্যাট সেল জন্মানোয় ভূমিকা রাখে।
যেসব দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিক দ্রব্য ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে : রিফিলযোগ্য পানির বোতল, বিন লাইনার, শাওয়ার জেলের বোতল, হেয়ার কন্ডিশনারের বোতল, ফ্রিজার ব্যাগ, রান্নাঘরের স্পঞ্জ
যেসব দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিক দ্রব্য ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে না : দই জাতীয় পানীয়ের বোতল, প্লাস্টিকের কাপ, কফি কাপের লিড।
কিছু প্লাস্টিকের দ্রব্যে যে পরিচিত মেটাবলিজম-ব্যাহতকারী উপাদান থাকে আবার কিছু দ্রব্যে থাকে না। কিন্তু যেসব দ্রব্যে থাকে না, সেগুলোও শরীরে ফ্যাট সেল তৈরি করে।
এর মানে হলো, প্লাস্টিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত না হওয়া কিছু রাসায়নিকও থাকে, যেগুলো আমাদের শরীর কীভাবে ফ্যাট জমা করবে তা নির্ধারণে প্রভাব ফেলে।
"এমনটা হওয়া খুবই সম্ভব যে এই উপাদানগুলো আমাদের সবসময়ের সন্দেহকৃত উপাদান নয়, যেমন বিসফেনল এ, যা মেটাবলিক অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে," বলেন গবেষণার অন্যতম লেখক জোহান ভোলকার।
"এর মানে হলো, আমাদের অপরিচিত অন্যান্য প্লাস্টিক রাসায়নিকও ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।"
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর পেছনে একটি বড় কারণ হলো স্থূলতা। তাছাড়া স্থূলতার কারণেই বিভিন্ন কার্ডিওভাস্কুলার রোগ ও ক্যান্সার হয়ে থাকে।
ওজন বেশি হলে আমাদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যেমন বেশি ওজন যাদের, তাদেরই কোভিডে আক্রান্ত হওয়া ও এর কারণে নানা ধরনের স্বাস্থ্য-ঝুঁকির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২০০ কোটি মানুষের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আর তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ কোটি মানুষ 'স্থূল' শ্রেণিভুক্ত।
- সূত্র: ডেইলি মেইল