অবসন্নতা রোগের চিকিৎসাতেও এবার গাঁজা সেবনের গুণাগুণ পেলেন গবেষকরা
ক্রমাগত ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করাকে ইংরেজিতে বলা হয়- 'ফেটিগ' বা অবসন্নতা। এই দশার শিকার হলে সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে উঠি আমরা। নাহয় কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। এতে আমাদের শরীর ও মন দুয়ের ওপরই গভীর প্রভাব পড়ে।
যেকারও জীবনে নানান কারণে আসতে পারে অবসন্নতা। ২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের ৭ থেকে ৪৫ শতাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে অবসন্নতার প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের মধ্যে এই হার ৩৮ শতাংশ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বেশকিছু অনুঘটকের মিলিত প্রভাবে দেখা দেয় অবসন্নতা। এরমধ্যে পূর্বাপর শারীরিক অবস্থা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস, কর্মক্ষেত্রের জটিলতা ও ক্লান্তিও থাকতে পারে। ফলে সকালে বিছানা থেকে উঠে দৈনিক কাজকর্ম করতেই কষ্ট হয় অনেকের।
তবে শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে কিছু ব্যক্তি অবসন্নতা যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবসন্নতা দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুম, মানসম্পন্ন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের চর্চা রপ্ত করা খুবই জরুরি। একইসাথে চাই শরীর চর্চা আর ওষুধ সেবন।
নতুন একটি গবেষণা জানাচ্ছে গাঁজার ফুলও অবসন্নতার চিকিৎসায় কার্যকর সমাধান হতে পারে।
চলতি বছরের এপ্রিলে কার্গার জার্নালে প্রকাশিত হয় গবেষণা নিবন্ধটি। এটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর গবেষক দল। মনোরঞ্জন ও চিকিৎসা উভয় কাজে ব্যবহৃত গাঁজার ফুল কীভাবে অবসন্নতা সারাতে পারে তা জানতেই ছিল এ অনুসন্ধান।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ছিলেন ১,২২৪ জন। ২০১৬ সালের ৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত নিজেরাই শুকনো গাঁজার ফুল পুড়িয়ে তার ধোঁয়া সেবন করেন এসব ব্যক্তি। এসব সেবনের তথ্য তারা গবেষক দলকে জানান রিলিফ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাঁজা সেবনের পর ৯১.৯৪ শতাংশের মধ্যে অবসন্নতা অনেকখানি কমে গেছে।
ইন্ডিকা, সাটিভা বা হাইব্রিড যেকোনো ধরনের গাঁজাই এনে দিয়েছে এ সুফল। তবে মিশ্রিত গাঁজার ধোঁয়া সেবনে এই উপসর্গের উল্লেখযোগ্য নিরাময় ঘটেছে। ভেপারাইজার ও পাইপ দুই পদ্ধতিতেই গাঁজা সেবন করেছিলেন গবেষণায় অংশ নেওয়ারা।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে, অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২৪ শতাংশেরও কম গাঁজা সেবনের ফলে অবসন্নতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো অনুভূতির শিকার হন। ফলে গবেষকরা এই উপসংহার টানেন যে, গাঁজার প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে একেক রকম হতে পারে। এজন্য দায়ী হতে পারে কোনো ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, আন্ত্রিক প্রক্রিয়া অথবা গাঁজা গাছের গুণাগুণের পার্থক্য।
উপসর্গ নিরাময়ের সাথে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা বা বয়সের তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে অবসন্নতা কাটিয়ে ওঠার হার বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রচলিত বিশ্বাস এই যে, গাঁজা সেবনে অবসাদ বাড়ে। এতে সেবনকারীর কর্ম তৎপরতা কমে যায়। মানুষ উদ্দেশ্যহীন আচরণ করে, হারায় সমাজে টিকে থাকার প্রতিযোগী সক্ষমতা। সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল এই বিশ্বাসের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
- সূত্র: ফোর্বস