ই-কমার্স রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই: ই-ক্যাব
ই-কমার্সে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার ইক্যাব আয়োজিত 'ই-কমার্স পলিসি টক ফর এড্রেসিং ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন' অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, "ই-কর্মাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা এক বছর আগেই টের পেয়েছিলাম। ব্যাপারটি নিয়ে ই-ক্যাবের সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছিল। তবে আমরা চাই ব্যবসা ভালোভাবে চলুক। সরকার তাদের সহায়তা করবে"।
তবে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের শেষে বক্তাদের পক্ষ থেকে প্রাইস ডাম্পিং এর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনকে আরো শক্ত নজরদারি ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি করার আহবান জানান ই-কমার্স মালিকরা।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, "পরোক্ষ ৮০ লাখ পরিবার এখন ই-কমার্সের সাথে জড়িত। আমরা চাইনা গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের দায়ভার সবার উপরে পড়ুক, দেশের সম্ভাবনাময় এই সেক্টর নষ্ট হোক। এজন্য এখন সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় খুব জরুরি। উদ্যোক্তাদের সুরক্ষার পাশাপাশি ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে সবার কাজ করার বিকল্প নেই"।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, "ডাক বিভাগে এখন চিঠি কম আসে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে পার্সেল আসে অনেক। এর অধিকাংশই ই-কমার্সের। এটা ডাক বিভাগের জন্য যেমন ভালো, আমাদের ই-কমার্সের জন্যও ভালো। সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। ক্রস বর্ডার ই-কমার্সের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাওয়া গেলে এটা আগামীতে সম্ভাবনা ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে"৷
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, "ই-কমার্সে যেটা ঘটেছে সেটার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা যখন ডেলিভারি সিস্টেমসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দ্রুত করা নিয়ে কাজ করছিলাম, তখনই এমন কাণ্ডে আমরা নিজেরাও অনেকটা সংকুচিত হয়ে গেছি"।
"ম্যাজিকের মতো শুধু কাস্টমার না, মার্চেন্টদেরও প্রলুব্ধ করতে সমর্থ হয়েছে রাসেল সাহেবরা (ইভ্যালির সিইও)। কিন্তু অপরাধীদের মতো তাদের নজরদারির মধ্যে রাখাটা সম্ভব না। এক-দেড় বছর আগে থেকেই আমরা বিষয়টা আঁচ করতে পারছিলাম। এসব প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন দিত, ছাড় দিত তাতেই আমাদের সন্দেহ ছিল"।
"তবে চাইলেই তখন এটাকে বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বা এক্সিট ওয়ে কী হবে তা নিয়ে ভাবার আগেই ঘটনা ঘটে গেল। কাস্টমাররা প্রচুর টাকা তাদের একাউন্টে দিয়ে দেয়াতে তাদের জন্যও কাজটা সহজ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের কোথায় গিয়ে থামতে হবে এটা বোঝা উচিত ছিল। যেটার ফলে এখন সবাই ভুক্তভোগী", বলে জানান তিনি।
"সব দায়িত্ব সরকারের উপর চাপানো যেতে পারে কিন্তু সেটাও ঠিক না। এখন যেমন পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, এটা নিয়ে আমার দ্বিমত আছে৷ ব্যবসা করতে গেলে সেখানে বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকতে হবে। এস্ক্রো সিস্টেম জটিল হওয়ায় তা ভালোভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাছাড়া সার্বিকভাবে এই সিস্টেম দাঁড় করাতে সময় লাগবে", বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাফিজুর রহমান আরও বলেন, "কঠিন হলেও এটাই বাস্তব সত্য, সরকার আইন করলেও অনেক সময় আইনের সুফল পেতে জনগণকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, সুতরাং আইন করলেই হবেনা। আইনের প্রয়োগ হতে হবে। ভোক্তা অধিকার সহ ভোক্তা সুরক্ষার উন্নতির উপর জোর দিতে হবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে"।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের ডিজিএম রাফেজা আক্তার কান্তা বলেন, "এস্ক্রো মডেল মেনে নেয়া ছাড়া ভবিষ্যতে ই-কমার্সে ব্যবসা করা দুরূহ হবে। এজন্য যারা এ খাতে ব্যবসা করতে আসছেন তাদেরকে ডিজিটাল সিস্টেমের পুরোটা মেনে নিয়েই আসতে হবে। এস্ক্রোর মাধ্যমেই তাদের পেমেন্ট নিতে হবে"।
"তবে এস্ক্রো সার্ভিসটি যেহেতু নতুন, সুতরাং এখানে বেশকিছু বিষয় সংযোজন করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে তখন একটা সার্কুলারের মাধ্যমে এটা শুরু করা হলেও এটার পদ্ধতিগত উন্নয়ন নিয়ে আমরা কাজ করছি। পলিসি নিয়েও কাজ করছি। কিছু জটিলতা থাকলেও ওই সময়ে এস্ক্রো সার্ভিস চালু করার চেয়ে ভালো বিকল্প ছিল না", বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "এস্ক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে যে টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে তা গ্রাহককে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলা হচ্ছে৷ এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের ব্যাপারে কোর্টের কোন নির্দেশনা নেয়া হবে কী না সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে"।
আজকের ডিলের সিইও ফাহিম মাসরুর বলেন, "দেশের বিদ্যমান যে ভ্যাট-ট্যাক্স পলিসি আছে সেটা অনলাইন ব্যবসার জন্য সহায়ক নয়। ই-কমার্সে ব্যবসা করলে উন্নত বিশ্বে যেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স কম দিতে হয়, সেখানে আমাদের এইখানে ট্রাডিশনাল বিজনেস থেকে আরো কয়েকগুণ ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। নইলে আগামীতে অনলাইনে ব্যবসা করা উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে"।
আইসিটি বিভাগের এটুআই এর হেড অফ ই-কমার্স রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, "সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ডের ফলে ই-কমার্স সেক্টর এক বছরের মতো পিছিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-কমার্সের বিকল্প নেই"।