কল মানি রেট ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
ব্যাংকগুলোতে হঠাৎ নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা টাকার সুদের হারও (কল মানি রেট) বেড়েছে। গতকাল সোমবার কল মানি মার্কেটের রেট ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গতকাল সোমবার কল মানি মার্কেটে আন্তঃব্যাংক লেনদেন হয়েছে ৮,৩৭৪ কোটি টাকা। তবে লেনদেনের পরিমাণ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না বাড়লেও এ দিনে কল মানি রেট ছিল ৩.১৪ টাকা। গত বছর আগস্টের পর এত বেশি রেট আর দেখা পায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক আমানতে সর্বনিম্ন সুদ হার বেঁধে দেওয়ার পর অনেক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিতে পারছে না। একইসঙ্গে অনেক ব্যাংকের আমানত কমে আসলেও ঋণের পরিমাণ কমছে না। অথচ ব্যাংকগুলোকে আমানত ও ঋণের বিপরীতে এডিআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংকগুলো মানি মার্কেটের ওপর নির্ভর করায় এর রেট হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে।
দেখা যায়, গত ৭ নভেম্বর কল মানি মার্কেটে লেনদের পরিমাণ ছিল ৮,৭৪৮ কোটি টাকা। সেদিন মার্কেট রেট ছিল ২.২৭ টাকা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর এর দাম বেড়ে এখন ৩.১৪ টাকার বেশি।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে কল মানি মার্কেটের রেট ছিল ১.৭৮ টাকা। এর পর মে মাসে কিছুটা বেড়ে ২.৮ টাকা হয়। জুনে ছিল ২.২৫ টাকা। আগস্ট সেপ্টেম্বরে ছিল ২ টাকার কম। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এর রেট বাড়তে থাকে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের আমানত কমে আসছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ঋণের বিপরীতে ১৩ শতাংশ অর্থ বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো সেটা টাকা সংগ্রহ করতে মানি মার্কেটে ঝোঁকায় রেট বাড়ছে।
অগ্রণী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। সাধারণ বড় আমানত থাকা ব্যাংকগুলো মানি মার্কেটে বিনিয়োগের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এতে মানি মার্কেটে তারল্যের সংকট দেখা দেওয়ায় এর বিনিময় রেট বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার মানি মার্কেটে ব্যাংকগুলোর টাকার চাহিদা ছিল ব্যাপক। এ দিন ব্যাংকগুলোর লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের ন্যায় হলেও মার্কেট রেট গড়ে ৪ শতাংশের বেশি হবে।
এ বিষয়ে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দীন আহমেদ দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, "করোনাকালে ব্যাংকগুলোর তারল্যের পরিমাণ বেড়েছে। এখন কোভিড কমে আসায় বিনিয়োগ বাড়ায় যেই তারল্য কমে আসছে। কোথায় ইনভেস্ট করলে লাভ বেশি, ব্যাংকগুলো তা দেখে। অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বন্ড-বিলে ভালো সুদ পাওয়ায় বিনিয়োগ করছে। এতে করে মানি মার্কেটে টাকা কম ছাড় হওয়ায় এর রেট বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "কল মানি রেট ব্যাংক টু ব্যাংক ৫০/৭০ পয়সা ছিল। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ডের রেট বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো সেদিকে ঝুঁকছে। এতে করে কল মানি মার্কেটে লেনদেনের রেট বাড়ছে। তবে ব্যাংক সরবরাহ বাড়ালে তারল্য সমস্যা থাকবে না।"
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমানতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০। ব্যাংকগুলো হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক এবং আলফালাহ্ ব্যাংক (বিদেশি) ।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকার আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা ও ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। এটি ঋণ–আমানতের অনুপাত (এডিআর) নামে পরিচিত।