গেল অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ২ হাজার ১৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা
২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউজের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ১৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যদিও গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে এক হাজার ২৪৮ কোটি টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বছরটিতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। করোনার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতায় এত বড় অংকের ঘাটতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এর আগেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। শুল্ক ফাঁকি ও নানা অব্যবস্থাপনায় অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছাড়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে এ বন্দরের কাস্টমস হাউসে রাজস্ব ঘাটতি হয়ে আসছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ তে ঘাটতি হয়েছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ তে রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছিল ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছিল ২০৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ তে ঘাটতি হয়েছিল ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ তে ঘাটতি হয়েছিল ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, 'গেল দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা ভারতে যেতে না পেরে চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেননি। এতে রাজস্ব আয় ব্যাহত হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে সকল অবকাঠামো বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস হাউজে থাকার কথা তা অনেকটা নেই। এতে লোকসানের কবলে পড়ে অনেকে এ পথে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। এটাও বেনাপোল বন্দরে কয়েক বছর ধরে রাজস্ব ঘাটতির কারণ'।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, 'বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে যেমন সময় অপচয় হয় তেমনি বন্দরে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বিএসটিআই ও বিএসআইরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন'। দীর্ঘ সময় ধরে রাজস্ব আয় কমার ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় কারণ বলে মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।
আমদানিকারক পিয়াস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে থাকে। তবে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না। আমদানিকারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহারা দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বৈধ পথে মাদকদ্রব্য প্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় ঝামেলা এড়াতে কিছু ব্যবসায়ীর অনেকে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। এসব কারণে পরপর ৮ থেকে ৯ বছর ধরে এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মতো রাজস্ব আদায় করতে পারছেন না'।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পণ্যগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরে আরও জমি অধিগ্রহণ ও পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল কবীর ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, 'করোনার বিরূপ প্রভাবে এত বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমলেও গতবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল বেশি। সঠিক নিয়মে রাজস্ব আদায়ে সক্রিয় হয়ে কাজ করছেন কাস্টমস সদস্যরা। যারা অনিয়ম করার চেষ্টা করেছেন তাদের জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে'।