চলতি বছর বৈশ্বিক চাল রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই করতে পারে ভারত
২০২১ সালে বৈশ্বিক চাল রপ্তানি বাণিজ্যের ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাজার ধরতে পারে ভারত। বন্দরে পণ্য ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়ার ফলে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ক্রেতা দেশগুলোতে এ বিপুল পরিমাণ রপ্তানির সুবিধা পাচ্ছে।
চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ধান উৎপাদক হলেও, চাল রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত। চলতি বছর দেশটি মোট ২ কোটি ২০ লাখ টন চাল জাহাজীকরণ করতে পারে। যা অন্য তিন শীর্ষ রপ্তানিকারক- থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সম্মিলিত রপ্তানির সমান।
ভারতের প্রথম সাড়ির চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্ডিয়া'র ভাইস প্রেসিডেন্ট নীতিন গুপ্ত এ তথ্য জানান।
নীতিন বলেন, "প্রচলিত ক্রেতাদের পাশাপাশি চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো ধান উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও এবছর ভারত থেকে চাল কিনছে।"
এর আগে ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বাড়ে ভারতীয় চালের রপ্তানি। এসময় রেকর্ড পরিমাণ বা ১ কোটি ৪৭ লাখ টন রপ্তানি হয়, এরমধ্যে বাসমতি চাল রপ্তানি বাড়ে ৭৭ শতাংশ। ৯৭ লাখ টন রপ্তানির মাধ্যমে এক্ষেত্রেও হয় নতুন রেকর্ড।
এ প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২১ সালেও চালের বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। বন্দরের বাড়তি সক্ষমতা যার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
নীতিন গুপ্ত জানান, গেল বছরের তুলনায় ২০২১ সালে (নন-বাসমতি) সাধারণ চাল রপ্তানি এক কোটি ৮০ লাখ টন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, একটু বেশি দামের বাসমতি চাল রপ্তানি ৪০ লাখ টন বাড়তে পারে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী ৪ কোটি ৮৫ লাখ টন চাল রপ্তানি বাণিজ্যের আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়।
সরবরাহ চক্রের সমস্যা:
গত বছরের মার্চ থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের তুলনায় ভারতীয় চালের দর ক্রমশ কমেছে। একইসময়ে বাড়তে থাকে খাদ্য পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা।
বিপুল মূল্যছাড়ে ২০২০ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে ভারত।
তবে দেশটির চাল রপ্তানির প্রধান বন্দর কাকিনাদা অ্যাঙ্কোরেজে অবকাঠামো সীমাবদ্ধতার কারণে জাহাজ জটের সৃষ্টি হয় গত বছর। এসময় অন্য সরবরাহ উৎসে চলে যায় অনেক ক্রেতা।
ভারতীয় চাল ব্যবসায়ী ব্রহ্মানন্দ গুড়িমেলতা বলেন, ক্রেতা ধরে রাখতে অন্য প্রতিযোগী রপ্তানিকারকদের তুলনায় আমরা টনপ্রতি ১০০ ডলারের বিশাল ছাড় দিয়েছি। তবে আমদানিকারকরা সময়মতো চালান না পাওয়ায়, তাদের বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে, যা মূল্যছাড়ের প্রায় পুরো লাভটাই শূন্যে নামিয়ে আনে।
জট কমাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কাকিনাদা বন্দরের পার্শ্ববর্তী একটি গভীর সমুদ্র বন্দরকে চাল বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
এতে পরিস্থিতির আমূল উন্নতি হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি বি.ভি. কৃষ্ণ রাও বলেন, "গভীর সমুদ্র বন্দর দিয়ে চাল রপ্তানি শুরু হওয়ার পর জাহাজের অপেক্ষার সময় অনেকটাই কমেছে। ফলে যেসব ক্রেতা অন্য দেশে চলে যেতে পারতো, তারা আমাদের সঙ্গেই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে ভারত। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
চলতি বছর নতুন গভীর সমুদ্র বন্দরটির মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ লাখ টন চাল জাহাজীকরণ করা যাবে, বলে জানান কাকিন্দা সিপোর্টস লিমিটেডের শীর্ষ পরিচালনা কর্মকর্তা এম. মুরালীধর।
অবকাঠামো উন্নত করা হলে কাকিনাদা অতিরিক্ত ২০ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারবে, বলে মন্তব্য করেন বি.ভি. কৃষ্ণ রাও।
ভারতের অধিকাংশ সাধারণ চাল রপ্তানি হয় এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ। আর দামি ব্যাসমতি চালের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
- সূত্র: রয়টার্স