চীন থেকে বাংলাদেশে কারখানা সরানোর কোনো প্রস্তাব নেই জাপানী বিনিয়োগকারীদের
সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কমিটি ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করলেও চীন থেকে বাংলাদেশে কারখানা সরিয়ে আনতে জাপানের কোনো কোম্পানির কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব পায়নি বাংলাদেশ।
জাপানের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে কারখানা স্থানান্তরের ব্যাপারে সরকার আশ্বাস পেলেও এখনো তা আশ্বাসেই রয়ে গেছে। জাপানের বিনিয়োগ আসবে কীনা, আসলে কবে আসবে- সে সম্পর্কে কোনো অনুমানও নেই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি- বিডা'র।
মার্চ-এপ্রিলের দিকে চীনে কোভিড সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে দেশটি লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে ভেঙ্গে পড়ে বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সরবরাহ চক্র।
এ অবস্থায় সরবরাহ চক্রে চীনের ওপর একক নির্ভরতা কমাতে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত কয়েকটি দেশ চীন থেকে অন্যত্র কারখানা সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়।
সবচেয়ে জোরালো উদ্যোগটি ছিল জাপানের। কারখানা স্থানান্তরের জন্য দেশটি এপ্রিল মাসের শুরুতে ২.২ বিলিয়ন ডলার তহবিলের ঘোষণা দেয়।
এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে চীন থেকে জাপানে কারখানা সরিয়ে আনতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর জন্য। বাকি ২০০ মিলিয়ন ডলার কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নিতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর জন্য।
চীন থেকে সরে আসতে আগ্রহী জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ পেতে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
জাপানি বিনিয়োগ পেতে তৎপর হয় বাংলাদেশও। মে মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জাপানি বিনিয়োগকারীদের কী ধরণের প্রণোদনা দেয়া যায়- তা চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে প্রণোদনার কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত আসেনি।
এরমধ্যেই জাপান সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা যেসব কোম্পানি পাবে তাদের একটি তালিকা ঘোষণা করে। ৫৭টি কোম্পানি জাপানে কারখানা সরিয়ে আনার জন্য পাবে ৫৩৫ মিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি। অন্য ৩০টি কোম্পানি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে কারখানা সরিয়ে আনার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থ সহায়তা পাবে।
চীন থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কারখানা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টি যাচ্ছে ভিয়েতনামে, ৬টি ইন্দোনেশিয়ায়, ৪টি মালয়েশিয়ায়, ৩টি ফিলিপাইনে এবং ২টি ভারতে।
এই সময়ে বাংলাদেশে কারাখানা সরিয়ে আনতে কোনো জাপানি কোম্পানিই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়নি। নিবন্ধনের জন্যও কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন বিডা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জাপানি বিনিয়োগকারীরা কস্ট এনলাইসিস করেই চীনে ইনভেস্ট করেছে। যতো কথাই বলা হোক না কেন, বিনিয়োগকারীদের চীন যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয় খুব কম দেশের পক্ষেই তা দেওয়া সম্ভব। জাপান সরকারের প্রণোদনা থেকে এককালীন কিছু টাকা পাওয়ার জন্য কোম্পানিগুলো চোখ বন্ধ করে হুড়মুড় করে অন্য দেশে চলে যাবে না।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো হয়তো পর্যাপ্ত শ্রমিক পাবে। কিন্তু, যে ধরণের দক্ষ শ্রমিক তাদের দরকার, সেটা বাংলাদেশে আছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে তো তারা এখানে কারখানা সরিয়ে আনবে না।'
চীন থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে জাপানের কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা বসাবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করা টাস্কফোর্সের সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
জাপান সরকারের দেওয়া প্রণোদনা সত্ত্বেও খুব বেশি কোম্পানি চীন থেকে সরবে বলে তিনি মনে করেন না।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, 'আমাদের দূর্ভাগ্যই বলতে হবে, জাপানের বিনিয়োগ আমরা খুব একটা পাই না। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানের মোট ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলারের।'
তবে বিডা চেয়ারম্যানের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে জাপানের বিনিয়োগ আসবে। আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হয়ে গেলে সেখানে সেখানে জাপানী বিনিয়োগ পাওয়া যাবে।
চীন থেকে জাপানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রণোদনার ঘোষণা কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাজ করছে। বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন আছে।