জনশক্তি রপ্তানি: কাজ আছে, আবেদনকারী নেই
বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি করেন মো শাহাদাত হোসেন। মহামারির মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরবে তার জনশক্তি রপ্তানির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে তার এজেন্সি ফোর-সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কাছে সৌদি আরব থেকে ৭০০-৮০০ জন শ্রমিক পাঠানোর চাহিদা আছে, তবে সে পরিমাণে আবেদনকারীর সংখ্যা অপ্রতুল।
বিদেশে শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে একই সঙ্কটের মুখে পড়েছে অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও। কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকেরই আয় কমে যাওয়ায়, বিদেশে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ভুগছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে অনেকেই মহামারি পরবর্তী সময়ে বিদেশগমনে ইচ্ছুক।
"সৌদি আরবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, দোকানের বিক্রেতা, শপিং মল ও হোটেলের কর্মীর চাহিদা আছে। দেশটির অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার পর আমরা ৮০ জন শ্রমিক পাঠিয়েছি।" বলেন ফোর-সাইট ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন।
"সৌদি আরব গমনে ইচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য ইমিগ্রেশনের খরচ কমিয়ে এনেছি আমরা। এ খরচ ৪ লাখ থেকে ২-৩ লাখে কমিয়ে এনেছি," বলেন তিনি।
গড গিফট ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা সহযোগী আমিনুল ইসলাম মাজিদ বলেন, "আমরা সৌদি আরবে আড়াইশোর মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঠিয়েছি। আমরা আরও এক হাজার কর্মীর খোঁজ করছি, কিন্তু আবেদনকারীর সংখ্যা অত্যন্ত স্বল্প।"
"আমরা মহামারির আগে প্রতিমাসে ৩০০-৪০০ জন শ্রমিক পাঠাতাম। কিন্তু বিগত চার মাসে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক মাত্র ৩০০ জন শ্রমিকের পাসপোর্ট পেয়েছি।" বলেন তিনি।
দাহমাশি করপোরেশনের চেয়ারম্যান নোমান চৌধুরী বলেন, "অনেকেই বিদেশ গমনে ইচ্ছুক, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যেতে পারছেন না।"
প্রতিবছর গড়ে সাত লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরি পান, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। গত বছর মহামারির মধ্যে বিদেশে শ্রমিক নিয়োগের এ চিত্র পালটে যায়, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত একেবারেই বন্ধ ছিল।
গত আগস্টেই মধ্যপ্রাচ্যের চাকরির বাজার পুনরায় খুলে যায়।
বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, গত বছর ২.১৭ লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।
জুলাই-ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম বাজার খুলে যাওয়ার পর তাদের মধ্য ৩৬ হাজার ৪৫১ জন বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশিদের জন্য পুনরায় শ্রম বাজার খুলে দেওয়া দেশগুলো হলো সৌদি আরব, ওমান, কাতার, জর্ডান ও সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অন্যতম গন্তব্যস্থল সৌদি আরব, বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের ৭৪ শতাংশ দেশটিতে নিয়োগ পায়। তাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৭২৯ জন সেপ্টেম্বর - ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। দেশটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ২৩ হাজার ৩৬২ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
ওমানের শ্রম বাজার পুনরায় খোলার পর ৩ হাজার ৬৭৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন দেশটিতে।
২০১২ সাল থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম বাজার বন্ধ থাকলেও, দেশটিতে ভিজিট ভিসা নিয়ে প্রবেশের পর শ্রমিকরা কাজ খুঁজে নিতে পারেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "বেশ কিছু দেশের শ্রমিকদের ৩ মাসের ভিজিট ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা নিয়োগের মাধ্যমে ওয়ার্কিং ভিসা পেতে পারেন, এবং নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি করতে পারেন,"
"আমি বর্তমানে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাতেই শ্রমিক পাঠাচ্ছি। এ মাসে দুবাইয়ে ২০০ জন শ্রমিকের চাহিদা আছে। তবে কর্ম সন্ধানীদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি," বলেন তিনি।
"বিমান টিকিটের খরচও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে, একারণে কাজ সন্ধানীরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।"
বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির সাথে জড়িত কফিল উদ্দিন মজুমদার বলেন, "মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রম বাজার হয়তো শীঘ্রই খুলে যাবে। একারণেই হয়তো অনেকে সৌদি আরবে যেতে আগ্রহ পাচ্ছেন না।"
প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি বাস করেন মালয়েশিয়ায়। দেশটি ২০১৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশের যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি মারফত শ্রমিক নিত তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।
গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের জন্য শ্রম বাজার খুলে দিতে রাজি হয় মালয়েশিয়া।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সাথে এক ভার্চুয়াল সভায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শীঘ্রই খুলে দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে ১.২ কোটি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন।