জ্বালানী আমদানি করতে বিকল্প অর্থায়নের খোঁজে সরকার
জ্বালানী আমদানি করতে বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজছে বাংলাদেশ সরকার। এই উদ্দেশে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইআইটিএফসি) কাছ থেকে উচ্চ সুদের ঋণ কমাতে চায় সরকার। আগামী ২০২০ সালের জন্য জ্বালানী তেল আমদানিতে জেদ্দা ভিত্তিক এ দাতা সংস্থার কাছে ঋণ নেওয়া হচ্ছে ৮০০ মিলিয়র ডলার।
যদিও আগামী বছরের জন্য সারা দেশে জ্বালানী তেল সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঋণের চাহিদা ছিল ১২০০ মিলিয়ন ডলার।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানী তেল আমদানির অর্থায়নে কয়েক বছর ধরে আইআইটিএফসি থেকে নিচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।
চলতি বছরে জ্বালানী তেল আমদানি করতে আইআইটিএসসির সাথে ১০০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে বিপিসি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিপিসি নেবে ৮০০ মিলিয়ন ডলার। পরে প্রয়োজন হলে বাকি ২০০ মিলিয়ন নেয়া হবে।
ছয় মাস মেয়াদি আইআইটিএফসি ঋণের ওপর চলতি বছর ৪.৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হলেও সংস্থাটি এবার সুদ হার কিছুটা কমিয়েছে। আগামী বছর এ হার হবে ৪.০৫ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক অধিদপ্তরের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের জন্য আইআইটিএফসির কাছ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে গত বুধবার সম্মতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আরও ঋণ প্রয়োজন হলে বিকল্প কোনও উৎস থেকে কম সুদে তা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে সুদ বাবদ ব্যয় কম হয়।
ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, জ্বালানী তেল আমদানি করতে কয়েক বছর ধরে সরকার একই উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে কোনও কারণে আইআইটিএফসি ঋণ না দিলে জটিলতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ফলে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সরকার বিকল্প উৎস খুঁজছে। এ কারণে বিপিসির প্রস্তাবিত ১২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের পুরোটা না নিয়ে সংস্থাটির কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার।
আইআইটিএফসির ঋণের বিষয়ে ইআরডি ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনেরও মতামত নিচ্ছে বিপিসি। সব সংস্থার সম্মতি পাওয়ার পরই ২০২০ সালের জন্য পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানী তেল আমদানির ঋণ চুক্তি হবে বলে জানান বিপিসির কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, দেশে জ্বালানী তেলের সরবরাহ সচল রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো ও আইআইটিএফসিকে 'স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার' বা কৌশলগত সহযোগী বিবেচনায় প্রস্তাবিত ঋণ নিতে রাজি হয়েছেন তারা।
এর আগে ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত করে জেদ্দা ভিত্তিক দাতা সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা করতে গত ২৪ ও ২৫ জুন সৌদি আরব সফর করেন বিপিসির একটি প্রতিনিধি দল। ওই সময় বিপিসি ও আইআইটিএফসি ঋণের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করে।
বর্তমানে দেশে বছরে ৬০ লাখ টন জ্বালানী তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ ১৫ লাখ টন তেল পরিশোধন করা হয়। বাকি ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বিপিসি। এতে প্রতি লিটারে অন্তত ছয় টাকা করে বাড়তি ব্যয় হয়।
এ ব্যয় কমাতে ইআরএলের সক্ষমতা আরও ৩০ লাখ টন বাড়াতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে অর্থায়নের অভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হচ্ছে না। ভর্তুকি দিয়ে ডিজেল বিক্রির কারণে ধারাবাহিক লোকসান ও বড় অঙ্কের ঋণের কারণে বিপিসির এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।