তুলার দাম এক দশকে সর্বোচ্চ
সামান্য বিরতি দিয়েই আন্তর্জাতিক বাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে তুলার দাম। মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা চীন আমদানি দেওয়াতেই বেড়েছে তুলার দাম। সেইসাথে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের চালু হয়ে যাওয়ার ফলে তুলার চাহিদা বেড়ে যাওয়াও দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বৈশ্বিক তুলাবাজারের অন্যতম সূচক নিউইয়র্কের কটন ফিউচার্সে প্রতি পাউন্ড তুলা ১ দশমিক শূন্য ৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১০ সালে তুলার দাম প্রতি পাউন্ডে ১ দশমিক ৬ ডলারে পৌঁছেছিল।
এছাড়াও গত ১০ মাসে তুলার দাম ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাকের আইটেম তৈরির মূল কাঁচামাল তুলার মূল্যবৃদ্ধি সুতার দামে ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ফলে ব্যাহত হবে পোশাকের চালান।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, তারা নভেম্বরে সুতা বিক্রির জন্য যে প্রোফর্মা ইনভয়েস ইস্যু করবেন, তাতে দাম ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।
প্রোফর্মা ইনভয়েস হলো একটি প্রাথমিক বিল বা চালান যা পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করার আগে ক্রেতাকে অর্থ প্রদানের অনুরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্রেতা এই ইনভয়েসের মাধ্যমে বিক্রেতাকে নির্দিষ্ট দামে এবং নির্দিষ্ট তারিখে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার চুক্তি করেন।
এ কারণে খোকন পোশাক রপ্তানিকারকদের অনুরোধ করেছেন, ক্রেতাদের সাথে দর কষাকষির সময় তারা যেন সুতা কেনার অতিরিক্ত খরচের কথা মাথায় রাখেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিশ্ববাজারে যদি তুলার দাম বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশে সুতার দাম কমপক্ষে তিন মাস পর বাড়া উচিত।
তার আগে সুতার দাম বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। অন্যথায় পোশাক প্রস্তুতকারকদের দেশের উৎস থেকে সুতা কেনার বদলে আমদানি করতে হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা যদি টিকে থাকতে না পারি, তারাও (স্পিনাররা) টিকে থাকতে পারবে না।'
লিটল স্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের চালু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী তুলার ব্যবহারও বেড়ে গেছে। এ কারণেই বেড়েছে তুলার দাম।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও চীন এখন তাদের ভবিষ্যৎ-চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে তুলা মজুদ করছে। দেশটি বোধহয় সম্ভাব্য সংকটের আশঙ্কায় এ কাজ করছে।
খোরশেদ আলম বলেন, 'আমি যখন ২০০ টন তুলা আমদানির জন্য একজন ভারতীয় সাপ্লায়ারের সাথে আলোচনা করছিলাম, তখন এর দাম প্রতি পাউন্ডে ০.০২ ডলার বেড়ে যায়।'
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে বাড়ছিল তুলার দাম। এর ফলে সুতা ও কাপড়ের দামও বেড়ে গেছে।
আরএমজি উদ্যোক্তারা দাবি করছেন, স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলো বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি দাম রাখছে। অন্যদিকে স্পিনাররা বারবার বলে আসছেন যে তারা তুলার দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দাম সুতার বাড়িয়েছেন।
যদিও উভয়পক্ষ সম্প্রতি সুতার মূল্য নির্ধারণে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
২০২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে পোশাক আইটেম বিক্রি করে এসেছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তুলা আমদানিতেও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮০ লাখ বেলের বেশি তুলা আমদানি করেছে। বেশিরভাগ তুলাই আমদানি হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে।