দেশি বিনিয়োগকারীদেরও উৎসাহিত করতে হবে: ডিসিসিআই
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংগঠনটির দাবী, মহামারির অভিঘাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেসরকারিখাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই।
ডিসিসিআই আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান। রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে শনিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রিজওয়ান রহমান আরও বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। বড় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যাকওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মিট দ্য প্রেসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রোড টু রিকভারি-সারভাইভ, রিভাইভ অ্যান্ড থ্রাইভ শীর্ষক উপস্থাপনায় খাতভিত্তিক সুপারিশ তুলে ধরেন ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট।
বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'এই মুহূর্তে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে যেসব দেশ এফডিআই রিলোকেশন করতে চায়, আমাদের সেই সুযোগ নিতে হবে। বিশেষ করে চীন থেকে জাপান ও কোরিয়ার সরিয়ে নেওয়া বিনিয়োগ গন্তব্য বাংলাদেশ হওয়া উচিত। এজন্য ইকনোমিক ডিপলোমেসি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।'
জানানো হয়, সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে চলতি বছরের শেষ দিকে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে ঢাকা চেম্বার।
বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করলে বাণিজ্য সংক্রান্ত যেসব সুবিধা হারাবে, তা পূরণে প্রস্তুতি জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের দেওয়া হয়েছে পরামর্শ।
ইউরোপে জিএসপি প্লাস সুবিধা নেওয়া, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করার পরামর্শ দিয়েছেন ডিসিসিআই সভাপতি।
আঞ্চলিক সংস্থা, বিশেষ করে আসিয়ানের অবজারভার হওয়ার চেষ্টা জোরদার করার কথা বলেছেন ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। এছাড়া পণ্য বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
বেসরকারিখাতের উন্নয়নে সিএমএসএমই (কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়েছে ডিসিসিআই।
ছোটদের বেশি সুযোগ দিতে মাঝারি শিল্পকে আলাদা করে কটেজ, মাইক্রো ও স্মলকে এক গ্রুপে ফেলে এসএমই আইন করার আহ্বান জানানো হয়।
পাশাপাশি, এ খাতের অর্থের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বন্ড চালু কিংবা আলাদা একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, সে বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট।
সিএমএসএমই খাতের জন্য ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেক বাস্তবায়ন হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে শতভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশে করপোরেট করের হার বিশ্বের গড় হার থেকে অনেক বেশি উল্লেখ করে বলা হয়, সারা বিশ্বে এই হার ২৩.৭৯% হলেও বাংলাদেশ ৩২.৫%। করপোরেট ট্যাক্স আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার দাবি তোলা হয়েছে।
পাশাপাশি, টার্নওভারের ওপর ভ্যাট আরোপ না করে ভ্যালু অ্যাডিশন কিংবা প্রফিট মার্জিনের ওপর ভ্যাট নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে ডিসিসিআই।
রেমিটেন্সের প্রসঙ্গে বলা হয়, কোভিডের প্রভাবে পরিবারের প্রয়োজনে গত বছর রেমিটেন্স আয় অনেক বেড়েছে। তবে চলতি বছর শেষে এই প্রবণতা হয়তো থাকবে না।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা পূরণ ছাড়াও নিউ নরমাল লাইফের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা ও গবেষণাখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সাগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে (ব্লু ইকনোমি) প্রতিবেশি ভারত কিংবা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে ডিসিসিআই। পণ্য পরিবহণে দেশের অভ্যন্তরণের জলপথের ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
মিট দ্য প্রেসে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআই'র উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালক মোঃ শাহিদ হোসেন, গোলাম জিলানী, হোসেন এ সিকদার এবং নাসিরউদ্দিন এ ফেরদৌস।