প্রতিদিন অনলাইনে ডেলিভারি দেড় লাখের অধিক পণ্য-সেবা
দেশে প্রতিদিন অনলাইন কেনাকাটায় দেড় লাখের অধিক পণ্য ও সেবা ডেলিভারি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। করোনাকালে এর পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
বৃহস্পতিবার করোনাকালীন অনলাইন পণ্য ও সেবা নিয়ে ই-ক্যাবের সংবাদ সম্মেলন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানান এর অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু।
সংবাদ সম্মেলনে ই-কমার্সের বিভিন্ন দিক এবং ই-ক্যাবের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, অনলাইনে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো পণ্য ও সেবা ডেলিভারি হচ্ছে। তবে টাকার অংকে দিনের লেনদেনের হিসাব না থাকলেও, বছরে সবমিলিয়ে ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকার।
ই-কমার্সে বিগত বছর সমূহে যেখানে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল গত বছর তা ৭০-৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এখন করোনা সংকট বাড়ার ফলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
ক্ষেত্রবিশেষে প্রবৃদ্ধির হার রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিত্যপণ্য ও খাদ্য ব্যবসায় গত বছর প্রবৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। শুধুমাত্র নিত্যপণ্যে ২০২০ সালের শেষ ৮ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
নতুন করে এ খাতে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, 'আমরা করোনাকালে ৬ হাজারের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। আগামীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রশিক্ষণ নিয়ে আরো কাজ করতে চাই'।
তিনি আরো বলেন, সদস্যদের অর্থসংকট মোকাবিলায় ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ১৩ টি প্রতিষ্ঠানকে জামানতবিহীন বিভিন্ন মেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, 'করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সর্বসাধারণকে অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেই প্রক্রিয়াকে সহজ ও ক্রেতাবান্ধব করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি'।
এই সংকটে যাতে ক্রেতাদের কোন ভোগান্তিতে না পড়তে হয় এজন্য ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে আবেদনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ই-কমার্স ডেলিভারীর সময়সীমা সন্ধ্যা ৬টা থেকে বর্ধিত করে রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে চলতি বছর ই-ক্যাব চারটি মুখ্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করেছে উল্লেখ করে ই-ক্যাব সভাপতি আরো বলেন, 'গ্রামীণ ই-কমার্স, ক্রস বর্ডার ই-কমার্স, সোস্যাল মিডিয়া কমার্স ও ই-কমার্সে অভিযোগ ব্যবস্থাপনা- এ বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া গেলে দেশে ই-কর্মাসের ভিত্তি শক্ত হবে'।
এ লক্ষ্যে আগামী ১১ এপ্রিল 'রুরাল টু গ্লোবাল' শিরোনামে একটি পলিসি কনফারেন্স এর আয়োজন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য বিষয়েও পলিসি সংক্রান্ত কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারের ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা বাস্তবায়নসহ পরিস্থিতির আলোকে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
এসময় এক প্রশ্নের উত্তরে ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি পর্যালোচনায় ই-ক্যাব'র ৭ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রতিবেদন আমরা ওনাদের দিয়েছি। এখন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি তাদের উপর'।
'তবে ব্যাপারে সরকারের আরো বেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে। তাদের প্রতিবেদনে কী উঠে আসে, আমরা সেদিকে নজর রাখছি। ওগুলো আমাদের হাতে এলে ই-ক্যাব কোন ব্যবস্থা নেবে কী না সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে আমরা সবসময় ন্যায্য ব্যবসায়ের পক্ষে। কেউ ক্রেতা ঠকানোর কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে'।
ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, 'ই-কমার্স খাতে শৃংখলা আনতে ই-ক্যাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের 'ডিজিটাল কমার্স নির্দেশনা' চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এটা চূড়ান্ত হলে আমরা আশা করি বর্তমানে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সেখানে ই-ক্যাবের যারা সদস্য না, অথচ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তাদের বিষয়গুলোও সংযুক্ত থাকবে'।
'তবে ক্রেতাদের সচেতন হয়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করতে হবে। ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার মাধ্যমে সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া ই-ক্যাবের কাছে যেসব প্রশ্ন আসে সেগুলোও আমরা সদস্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি'।
উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল ছিল ই-কমার্স দিবস। এবারের ই-কমার্স দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয় 'ঘরে থাকাই নিরাপদ, ই-কমার্সই ভবিষ্যৎ'। করোনা সংকটের কারণে এবার সরাসরি কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও, এ উপলক্ষ্যে অনলাইনে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।