বাংলাদেশে ভাঙ্গা হবে সবচেয়ে বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজ কোকুরা
বাংলাদেশের সীতাকুন্ড উপকূলে ভাঙ্গার জন্য আসছে সর্ববৃহৎ কন্টেইনারবাহী জাহাজ কোকুরা। গ্রিকভিত্তিক শিপিং জায়ান্ট কোস্তামেয়ারের মালিকানাধীন এ জাহাজ হতে যাচ্ছে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ কন্টেইনারবাহী স্ক্র্যাপ জাহাজ। সীতাকুন্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ড হতে যাচ্ছে জাহাজটির শেষ গন্তব্য।
ইয়ার্ড মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এতোদিন এরচেয়ে বড় ওজন ও আয়তনের জাহাজ ভাঙ্গা হলেও এটিই সবচেয়ে বড় কন্টেইনারবাহী জাহাজ। আগে বড় যেসব জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছে তা ছিল মূলত অয়েল ট্যাংকার। সাধারণত এ ধরণের জাহাজে দূষণের মাত্রাও থাকে অনেক কম।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে প্রায় ২৩৬টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে ভারতকে পেছনে ফেলে শীর্ষ স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ।
এই প্রসঙ্গে পিএইচপি শিপ বেকার্স এন্ড রিসাইকালার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি ওই সময়কার সব চেয়ে বড় কইটেইনারবাহী ভ্যাসেল। এ ধরণের জাহাজ বাংলাদেশে বিক্রি করছে এটা নিঃসন্দেহে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের জন্য ইতিবাচক দিক। এর ফলে বড় বড় শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ একটি আস্থার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশী ইয়ার্ড মালিকরা এ জাহাজটি কিনেছে। তবে কে বা কারা কিনছে তা এখনো জানতে পারিনি। সবচেয়ে বড় এ কইটেইনার জাহাজটি বাংলাদেশ বিক্রির জন্য ঘোষণা দিয়েছিল ব্রোকার প্রতিষ্ঠান। ব্রোকার প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাজটি কিনে নেয় ক্যাশ বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্যাশ বায়ার থেকে বাংলাদেশী ইয়ার্ড মালিকরা এ জাহাজটি কিনেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
কোস্তামেয়ার জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির ঘোষণা আগেই দিয়েছে। এটি কোথায় ভাঙা হবে এবার সেই ঘোষণা দিলো ব্রায়েমার এসিএম। ১৯৯৭ সালে নির্মিত ৭,৪০৩ টিইইউস কন্টেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজটি বাংলাদেশেই ভাঙা হবে বলে জানিয়েছেন ব্রোকার প্রতিষ্ঠানটি। জাহাজটির এলডিটি ৩৩ হাজার ১০০ টন। জাহাজটির দৈর্ঘ ৩১৮ মিটার এবং প্রস্থ ৪৩ মিটার। বর্তমানে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এ জাহাজটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানটি থেকে কিনে নেয় ক্যাশ বায়ার প্রতিষ্ঠান সোম্যাপ শিপিং প্রাইভেট লিমিটেড।
ক্যাশ বায়ার প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশীদের কাছে এ জাহাজ বিক্রি থেকে এলডিটি(লিস্ট ডেট টন) প্রতি ৩২৩ ডলার করে। সেই হিসেবে জাহাজটি মূল্য দাড়ায় ৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
ডেনমার্কে মায়েস্কের বিলুপ্ত শিপইয়ার্ড ওডেন্সে নির্মিত জাহাজটি সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য দিয়েছে আলফালাইনার। ১৯৯৩ সালে এপি মোলার-মায়ের্স্ক ছয়টি জাহাজের যে সিরিজটির সরবাহ আদেশ দিয়েছিলো কোকুরা তার একটি। সে সময় এটিই ছিল সর্ববৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ।
যদিও ধারণক্ষমতার কথা কমিয়ে বলেছিলো মায়েস্ক। ৪,৮০০ টিইইউস ধারণক্ষমতার ছয়টি কন্টেইনার জাহাজের নির্মাণাদেশ দেয়ার কথা সে
সময় ঘোষণা দিয়েছিলো শিপিং অপরারেটরটি। কয়েক মাস পর অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সঙ্গে মিল রেখে ধারণক্ষমতা ৫,০০০ টিইইউস ঘোষণা দেয় মায়ের্স্ক। তারপরও তা ছিল প্রকৃত ধারণক্ষমতার চেয়ে ২,০০০ টিইইউস কম।
করোনাভাইরাস মহামারী চার্টার মার্কেটের চাহিদা নজিরবিহীনভাবে কমিয়ে দিয়েছে। এ মন্দা ২০২০ সালের পুরো সময়জুড়ে থাকবে বলে মনে করছেন ব্রায়েমারের বিশেষজ্ঞরা, যা আরো বেশি সংখ্যক জাহাজকে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের দিকে ঠেলে দেবে।
তবে স্ক্যাপ জাহাজের বাজার বর্তমানে চাপের মধ্যে রয়েছে। ব্রায়েমারের হিসাব বলছে, ২০২০ সালের এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি কন্টেইনার জাহাজ ভাঙা হয়েছে। ২০১৯ সালের একই সময়ে যেখানে ভাঙা হয়েছিলো ৫৮টি কন্টেইনার জাহাজ।
তবে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কাজ পুরোদমে শুরু হলে কন্টেইনার জাহাজের বিক্রি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন এ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সেপ্টেম্বরে ভারতে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ায় ২০২০ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে স্ক্র্যাপ জাহাজের বিক্রি বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে জাহাজ ভাঙ্গা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আলী শাহীন বলেন, এ ধরণের জাহাজ প্রথম আসেছে দেশে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী যারা এ ধরণের জাহাজ আগে কেটেছে কিংবা যারা পরিবেশ সম্মতভাবে এ ধরণের জাহাজ কাটতে পারে তা দেখে সরকারের জাহাজ আমদানিতে অনুমোদন দেয়া উচিত। সাধারণত আধুনিক ও গ্রিন ইয়ার্ডে এ ধরণের জাহাজ কাটা হয়।