বাজেটে নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ সহায়তার প্রস্তাব ডিসিসিআই ও বিসিআইয়ের
করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় আগামী বাজেটে দেশে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি ব্যবসায়ী সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)।
এছাড়া নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনসহ আগামী বাজেটে কোম্পানির জন্য করপোরেট হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, কোম্পানির আরএনডি খাতে অন্তত ৫ শতাংশ ব্যয় করমুক্ত রাখা, ডিভিডেন্ট করহার ১০ শতাংশ কমানো, রিফান্ড প্রদানের সময় ১ মাস করা, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে করহার ১ শতাংশ করা এবং পুঁজিবাজারে গ্রিনফিল্ড অবকাঠামো বিনিয়োগের ৫ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দাবি করেছেন সংগঠন দুটি।
বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআইর পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি রিজওয়ান রহমান ও বাংলাদেশ চেম্বারের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ারুল- উল আলম চৌধুরী তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
পৃথক দুটি বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
প্রথম আলোচনায় অংশ নিয়ে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। নতুন উদ্যোক্তারা প্রায় সবাই মূলধন হারিয়েছেন। এমতাবস্থায় তাদের ওপর করারোপ হলে কেউ ঘুরে দাড়াতে পারবে না।
বাজেটে তাদেরকে বিশেষ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, "এসব প্রতিষ্ঠান বড় হলে কর-ভ্যাট সবই দিতে পারবে।"
এ সময় আগামী বাজেটের জন্য বেশি কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিসিআই সভাপতি।
অনুষ্ঠানে বিসিআইর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মহব্বত উল্লাহ বলেন, "পাঁচ বছর আট মাস পর দাবিনামা জারি করে ব্যবসা আটকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ তখন এনবিআরের কর্মকর্তারাই পন্য খালাস দিয়েছেন। পরে ব্যবসা চালু করার জন্য (আনলক) বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অনলাইন করা হয়েছে, কিন্তু কে ব্যবহার করে?"
আরেক বাজেট আলোচনায় আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক আইনে সংশোধনের জন্য ৩৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
কোম্পানির করহার বছরে আড়াই শতাংশ করে আগামী তিন বছরে সাড়ে সাত শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও কর্পোরেট করহার বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম।
আলোচনায় কর্পোরেটর ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ কর অর্ধেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হলে তাতে কর সুবিধা দেয়া, ব্যবসায়ীদের তিন কোটি টাকার উপরে মোট আয়ের ওপর বাধ্যতামূলক ০.৫ শতাংশ কর অর্ধেক কমানো, পুরো আয়কর ব্যবস্থাকে অনলাইনের আওতায় আনার প্রস্তাব দেন ডিসিসিআই সভাপতি।
ভ্যাটে রিফান্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে তিন মাসের পরিবর্তে একমাস করা এবং প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি জরিমানা নিচের সারির কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়ায় এর অপব্যবহারের আশঙ্কার কথাও বলেন রিজওয়ান রহমান।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, "এই ক্ষমতা বেশি জুনিয়রের কাছে চলে গেলে অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।"
এছাড়া এইচ এস কোডের (পণ্য পরিচিতি নম্বর) ভুলে জরিমানা কমিয়ে আনা, টার্নওভার করের ক্ষেত্রে ঊর্দ্ধসীমা তিন কোটি টাকা করা এবং এই হার চার শতাংশ করা, শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর চার শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া ৫০ লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভার (বার্ষিক বিক্রি) না হলেও বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করতে হচ্ছে, যা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোহাম্দ আলী হোসেন কাপড় বিক্রির ভ্যাট সিস্টেমের পরিবর্তনের দাবি করেন।
তিনি বলেন, একজন খুচরা ব্যবসায়ী বছরে ৫ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করলে তার লাভ হয় ৮-১০ লাখ টাকা। কিন্তু টার্নওভারের ওপর ৫ শতাংশ হারে ২৫ লাখ টাকা ভ্যাট দাবি করছেনে এনবিআরের কর্মকর্তারা। ফলে সব খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। এমবস্থায় খুচরা বিক্রেতাদের নতুন মূল্য সংযোজনের ওপর এ করারোপের দাবি করেন তিনি।
চেম্বারের আলোচনার জবাবে স্থানীয় শিল্পকে সুবিধা দেয়ে বাজেট প্রণয়নের কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। আগামী বাজেটে হোম অ্যাপলায়েন্স পণ্য উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা ভাবার কথা জানান তিনি।
এর আগে বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অলাভজনক সংস্থা হিসেবে এ খাতের আয়ের ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয় হলে কর কেন হবে না? তবে ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে যেতে কর সুবিধা দেয়া যায় কিনা, সেবিষয়ে আমরা ভাবছি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সুবিধাই এনবিআর যাদের উদ্দেশ্যে দেয়, তারা পায়না। বরং এ ধরণের সুবিধা অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের হাতে চলে যায়। দেখা গেল ক্ষেত্রবিশেষে সুবিধার ৯৮ শতাংশই অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। এছাড়া উদ্যোক্তাদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি।