বিনিয়োগকারীর মৃত্যুতে বন্ডের মালিকানা জটিলতা কাটতে যাচ্ছে
সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ আছে এমন বিনিয়োগকারীর মৃত্যু হলে তার মনোনীত নমিনী কিংবা নমিনী মনোনীত না থাকলে বৈধ উত্তরাধিকারী বন্ডের মালিকানা পাবেন। নমিনী কিংবা উত্তরাধিকারী মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত বন্ড ধরে রাখতে পারবেন। অথবা বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন।
এমন বিধান রেখে গেল ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারি ট্রেজারি বন্ড বিধিমালা ২০২১ এর খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে অর্থবিভাগ। মতামতের জন্য এক মাস সময় দেয়া হয়েছে। এরপর বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।
এতে বলা আছে, বিনিয়োগকারী তার হিসাব খোলার সময় এক বা একাধিক নমিনী মনোয়ন করতে পারবেন। একাধিক নমিনী মনোনীত করলে প্রত্যেক নমিনীর মালিকানার পরিমাণ শতকরা হারে উল্লেখ করতে হবে। নমিনী ও শতকরা হার পরিবর্তন করা যাবে। নমিনী মনোনীত করা না থাকলে বিনিয়োগকারীর মৃত্যুতে বৈধ উত্তরাধিকারীরা বন্ডের আইনগত মালিক হবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, "ব্যাংক একাউন্ট করার ক্ষেত্রে নমিনীর বিষয়টি থাকলেও এত দিন বন্ড এর ক্ষেত্রে এই বিধান ছিল না। এতে কোন বিনিয়োগকারী মারা গেলে তার বন্ডের মালিকানা পেতে উত্তরাধিকারীদের জটিলতার মুখে পড়তে হত"।
বৈধ উত্তরাধিকারের প্রমাণ দিতে আদালত থেকে সনদ সংগ্রহ করে জমা দেয়ার পরই মৃত বিনিয়োগকারীর বন্ডের মালিকানা স্বত্ব পেতেন উত্তরাধিকারীরা। এবার সেই জটিলতা কেটে যাবে।
তিনি জানান, বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বন্ডে বিনিয়োগ জনপ্রিয় করতেই বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। আগে বিধিমালা না থাকায় অর্থবিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় যে প্রজ্ঞাপন দেয়া হতো সে অনুযায়ী বন্ড মার্কেটের কার্যক্রম চলতো।
বিধিমালায় বিনিয়োগকারী প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশে বসবাস করা ব্যক্তি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, করপোর্টে প্রতিষ্ঠান, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।
বিধিমালায় বন্ডে বিনিয়োগ সীমা প্রসঙ্গে কিছু না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্ডে বিনিয়োগের কোন ঊর্ধ্ব সীমা নেই। ন্যূনতম ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ যে কোন পরিমাণ অর্থ যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে এবং বিনিয়োগের অর্থের উৎস প্রসঙ্গে কোন প্রশ্ন করা হয় না।
এছাড়া অনিবাসী বাংলাদেশিসহ যে কোন বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারবে। বিদেশি বা অনিবাসী বিনিয়োগকারীরা তাদের মুনাফা কিংবা বন্ড বিক্রির অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে নিয়ে যেতে পারবে। প্রচলিত আয়কর আইন অনুযায়ী সরকারি বন্ডের মুনাফার উপর কর প্রযোজ্য হবে।
বন্ডের মেয়াদ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি ট্রেজারি বন্ড ২,৫,১০,১৫ কিংবা ২০ বছর মেয়াদী হবে। এছাড়াও বিধিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অন্য যে কোন মেয়াদী বন্ড ছাড়া যাবে। মেয়াদ পূর্তিতে কিংবা তার আগে বিনিয়োগকারী তার প্রাইমারি কিংবা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন।
সেকেন্ডারি মার্কেটের অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ডের লেনদেন করার জন্য আগে অনুমোদন ছিল না। খসড়া বিধিমালায় সেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, কিভাবে লেনদেন পরিচালনা করা হবে এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তাদের সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি কার্যবিবরণী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কাছেও দেয়া হয়েছে।
এছাড়া খসড়া বিধিমালায় ইলেকট্রনিক লেনদেনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে লেনদেন চলাকালীন কোন ধরনের জটিলতা তৈরি হলে তা দূর করা সহজ হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্ড লেনদেনে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তা নিষ্পন্ন হবে।
বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলে, "বিনিয়োগকারীর নমিনী রাখার বিষয়টি খুব ভালো উদ্যোগ হয়েছে। এতে জটিলতা কমায় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ডে বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন"।
তিনি বলেন, "সরকারি বন্ডে সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগ করে থাকেন। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের এ ক্ষেত্র সম্পর্কে কমই জানেন"।
"এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেট হিসেবে ডিএসইতে বন্ড কেনাবেচা হলে সাধারণ বা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে যা বন্ড মার্কেট এর পরিসর বাড়াতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতে করপোরেট বন্ডকেও জনপ্রিয় করে তুলবে", যোগ করেন তিনি।