১০ বছরে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে
সরকার দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অধিকতর ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করায় ১০ বছরে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারী কোম্পানির সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৩২১টি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। অথচ ২০১০ সালে বাংলাদেশে মোট জাপানি বিনিয়োগকারী কোম্পানি সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৩টি। জাপানের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থা (জেট্রো) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জেট্রো'র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইউজি আন্দো আজ (শনিবার) বাসস'র সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জাপানের বিনিয়োগকারীদের অধিক পছন্দের দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে সস্তায় শ্রমিক এবং ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বাজারের সুযোগ লুফে নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প, বস্ত্র, আইটি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঢাকা সফরের পর দিন দিন বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি কাড়তে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে। ফলে বিপুল সংখ্যক জাপানি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসেছে।
তিনি বলেন, জাপানের অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ জাপানের সরকারি উন্নয়ন (ওডিএ) সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা থাকায় অনেক জাপানি ব্যবসায়িক কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। জাপানি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপন, ক্রমবর্ধমান চাহিদার ভোগ্যপণ্য সরবরাহ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ভিত্তিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীন বিভিন্ন প্রকল্পেও বিনিয়োগ করছে।
তবে জাপানের এই প্রতিনিধি বলেন, তার দেশের এবং অন্যান্য বিদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে তিনি অবকাঠামো ও কর জটিলতার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি ট্যাক্স ও ভ্যাট ব্যবস্থায় দ্রুত সেবা নিশ্চিত এবং প্যারেন্ট কোম্পানি থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য বিদেশি লোন ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাপান উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে এবং দিন দিন এই অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে জাপানি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুশাসন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সাংস্কৃতিক ও পারস্পরিক সফর বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদান করায় এ দেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার হচ্ছে জাপান।