৫৬ বছর পর আবারো বাংলাদেশে চায়ের নিলাম চায় ত্রিপুরা
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে পণ্য রপ্তানি করত ভারতের ত্রিপুরা। ৫৬ বছর পর আবারো বাংলাদেশে তার চায়ের নিলাম তুলতে চায় ত্রিপুরা।
ত্রিপুরার রয়েছে শতাব্দী পুরনো চায়ের ইতিহাস। রাজ্যের চা উৎপাদকেরা এখন ত্রিপুরার উত্তর সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের চা বিক্রি করতে চান।
ত্রিপুরা চা উন্নয়ন কর্পোরেশনের (টিটিডিসি) চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা বলেন, "রাজ্যে কোনও নিলাম কেন্দ্র না থাকায় ত্রিপুরায় সবসময়ই চা নিলামে তোলার সমস্যা ছিল। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভারত সরকারের কাছে বাংলাদেশের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন যাতে করে ত্রিপুরার চা উৎপাদকরা সীমান্তের নিকটবর্তী শ্রীমঙ্গলে তাদের পণ্যের নিলাম করতে পারে।"
ত্রিপুরায় ৫৮টি চা বাগান রয়েছে যার মধ্যে ৪২টি স্বতন্ত্র মালিকানাধীন, ১৩টি সমবায় সমিতি পরিচালনা করছে এবং ৩টি ত্রিপুরা চা উন্নয়ন কর্পোরেশন (টিটিডিসি) দ্বারা পরিচালিত। এ ছাড়া সীমান্ত রাজ্যটিতে প্রায় তিন হাজার ক্ষুদ্র চা চাষী রয়েছেন।
মজার বিষয় হল, ত্রিপুরার চা বাগানগুলো রাজ্যটির তৎকালীন শাসক মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্যের নেতৃত্বে ছিল; তিনি ব্রিটিশদের তার রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি দিতেন না।
বর্তমানে, ত্রিপুরার চা উৎপাদনকারীদের অনেক দূরের গুয়াহাটি এবং কলকাতা নিলাম কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে হয়, যা একইসাথে ব্যয়বহুলও। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের আগে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভ্রমণ ও বাণিজ্য সহজ ছিল; তখন ত্রিপুরার চা চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি হত এবং সেখান থেকেই বন্দরের বাইরেও রপ্তানি হত। যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সম্পর্কের ফাটল এই ব্যবস্থা ব্যাহত করে।
ত্রিপুরার লক্ষ্মী চা কোম্পানির ব্যবস্থাপক মানস ভট্টাচার্য বলেন, ত্রিপুরায় চা নিলাম কেন্দ্রের অনুপস্থিতি দেশের প্রধান বাজারগুলোতে পণ্য পাঠাতে বা বিদেশে চা রপ্তানি করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা।
চা উৎপাদকেরা আশা করছেন, শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে চা বিক্রি করতে পারলে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও রপ্তানি সম্ভব হতে পারে।
সন্তোষ সাহা বলেন, ত্রিপুরার কৃষি-জলবায়ু পরিস্থিতি চা উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল। এখন আমরা ত্রিপুরার চায়ের জন্য অনুমোদিত লোগো পেয়েছি ফলে আসাম এবং দার্জিলিং চায়ের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারব।
১৯১৬ সালে প্রথম ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার হিরাচেরা চা এস্টেটে চা উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, রাজ্যটির ৬,৮৮৫ হেক্টর জমি চা চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটি বর্তমানে বার্ষিক ৩.৫৮ কোটি কেজিরও বেশি গ্রিন-টি পাতা উৎপাদন করে থাকে।
- সূত্র-ইস্টমোজো