সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৯৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে ৭টি প্রতিষ্ঠান
দেশের প্রথম বিশেষায়িত ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৭টি প্রতিষ্ঠান অন্তত ৯৪.৪৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। নতুন বিনিয়োগ করা এসব প্রতিষ্ঠান তারকা মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ স্থাপন করবে, যেখানে প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে পাঁচতারকা হোটেলসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনা তৈরিতে বড় বিনিয়োগ করবে ইফাদ গ্রুপ। ইফাদ অটোজ ছয় একর জায়গা পেয়েছে, যেখানে হোটেল নির্মাণে ৩১.৬৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে ৩৫০ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে।
ইফাদ গ্রুপের আরও একটি প্রতিষ্ঠান এক একর জায়গায় একটা প্লট নিয়েছে, ইফাদ মোটরস লিমিটেড সেখানে ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এছাড়া ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজ, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (প্রা.) লিমিটেড, ডিআইপিটিএ গার্মেন্টস লিমিটেড, ডিআইআরডি গার্মেন্টস লিমিটেড হোটেল, কটেজ ও রেস্টুরেন্ট তৈরী করবে।
ইতিমধ্যে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানিয়েছে, বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন করেছে।
ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু টিবিএসকে বলেন, "ছয় একর জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল করার জন্য আগামী মাস থেকে আন্তর্জাতিক চেইন হোটেলের সঙ্গে কথা বলা শুরু করবো। এক একর জায়গা যেখানে দেয়া হয়েছে সেখানে রিসোর্ট এবং ছোট একটা এমিউজমেন্ট পার্কও তৈরী করবো। স্পিডবোট থাকবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের দেশের জনগণও যেন ব্যবহার করতে পারে সে কথা আমরা মাথায় রাখছি। আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেওয়ার পরও খরচ যেন কম হয় সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।"
বেজার তথ্য অনুসারে, ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড ২ একর জমি পেয়েছে যেখানে তারা হোটেল-রিসোর্ট তৈরী করবে। ১৭.২৯ মিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগে কর্মসংস্থান হবে ৩১৫ জনের। এছাড়া ডিআইআরডি গার্মেন্টস লিমিটেড ১ একর জমিতে ৬.৬৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কটেজ ও রিসোর্ট তৈরির প্রস্তাবনা দিয়েছে।
আর ডিআইপিটিএ গার্মেন্টস লিমিটেড ২ একর জায়গায় ৪.২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে হোটেল-রিসোর্ট করবে। এতে অন্তত ৩০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে তারা আশা করছে।
সাবরাং এলাকার পর্যটন অঞ্চলটিকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ ফুট উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে আইকোনিক ফটো কর্নার উদ্বোধন করেছে বেজা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, "শীঘ্রই এসব কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বেজা বিনিয়োগবান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে।"
"সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভূমি উন্নয়ন কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সুপার ডাইক, প্রশাসনিক ভবন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। সীমানা দেয়াল নির্মাণের কাজ চলমান আছে," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাকি অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে এবং বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ একর জমি দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে ভূমি ইজারা চুক্তিও করেছে বেজা। এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে ২০২ মিলিয়ন ডলার। ৯ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হবে এসব প্রতিষ্ঠানে।
কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রের পাড়ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক; এখানে ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন এ্যকুয়ারিয়াম ও সি-ক্রুজ, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা, সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, ইকো-কটেজ, ওশেনেরিয়াম, আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্টসহ নানা রকমের বিনোদনের সুবিধা থাকবে।
কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এই পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ৩৯ হাজার পর্যটক উপভোগ করতে পারবে। ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এখানে।
রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, "প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শানিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত ঘিরে প্রচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে। তারপরেও বিদেশি পর্যটক তেমন আসে না বাংলাদেশে।"
"এর অন্যতম প্রতিবন্ধকতা তাদের জন্য আলাদা এলাকা নেই। এখন পরিকল্পিতভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। এর ফলে বিদেশি পর্যটক আরও বেশি আসবে দেশে। আর দেশি প্রতিষ্ঠান যদি এখানে বিনিয়োগ করে, সেটা দেখে বিদেশি আন্তর্জাতিক মানের চেইন হোটেলগুলোও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী বেশি হবে," বলেন তিনি।