মেঘনা থেকে পানি আসবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি সরবরাহে মেঘনা নদী থেকে পানি আনার প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডির (সম্ভাব্যতা যাচাই) কাজ শুরু করতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা ও কোরিয়ান কোম্পানি-তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চট্টগ্রাম ওয়াসার 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-জি টু জি প্রক্রিয়ায় মেঘনা নদী হতে পানি পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ' প্রকল্পটির গত ৩১ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রথম ধাপ এগিয়ে গেছে। সিসিইএ'র সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় এখন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশের বৃহত্তম ও প্রথম পরিকল্পিত শিল্পনগর। চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা আর ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় বিস্তৃত প্রায় ৩৩ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠছে এই শিল্পনগর। সেখানে দেশি-বিদেশি ১৫৯টি কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলার। সম্প্রতি এ শিল্পনগরে উৎপাদন শুরু করেছে এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, জাপানের নিপ্পন স্টিল কর্পোরেশন ও বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্ট।
বিশাল এই শিল্পনগরে দৈনিক পানির চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৩ মিলিয়ন লিটার। তাই পানির প্রাপ্যতা নিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিলো শুরু থেকেই। কয়েকটি কারখানা নিজস্ব টাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে কাজ শুরু করলেও পানির স্থায়ী সমাধান নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত।
শুরুতে প্রাথমিকভাবে শিল্পনগরের জন্য হালদা নদী থেকে পানি আনার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)। প্রতিদিন ১৫৪ মিলিয়ন লিটার পানি আনার পরিকল্পনা ছিলো প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু বাড়তে থাকা লবণাক্ততার কারণে হালদা নদী নিজেই সংকটে থাকায় সে পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে হয় বেজাকে। পরবর্তীতে ৫০টি গভীর নলকূপ বসিয়ে দৈনিক ৫০ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বেজার এ উদ্যোগটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, 'চাঁদপুর রেলস্টেশনের কাছে মেঘনা-পদ্মা ও ডাকাতিয়ার সংযোগস্থল থেকে পানি উত্তোলনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখান থেকে দৈনিক ৯০০ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) পানি উত্তোলনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। চাঁদপুরের ওই স্থান থেকে পানি মীরসরাইয়ের শিল্প নগরে আনতে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কোরিয়ান কোম্পানি-তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বাস্তবায়নে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত বছর।'
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, চাঁদপুরের মেঘনা, পদ্মা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় মিষ্টি পানির বিশাল ভান্ডার রয়েছে। যেখান থেকে দুই থেকে চারশ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা যাবে। পাইপলাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে দু'টি বিকল্প রাস্তার কথা ভাবা হচ্ছে। এর একটি চাঁদপুর রেলস্টেশন থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি হয়ে ফেনী এবং সেখান থেকে মীরসরাই। এই পথে পানি আনতে হলে ১২৬ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। অপরদিকে চাঁদপুর থেকে লাকসাম ফেনী হয়ে মীরসরাইয়ে পানি আনার অপর একটি রাস্তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। রেললাইনের পাশ দিয়ে ১৩২ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা যাবে। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে চূড়ান্ত করা হবে যে, পানি আনতে কোন পথটি ব্যবহার করা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে দীর্ঘ দূরত্বে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি আনার সময় পথে হাজিগঞ্জ, লাকসাম, ফেনী, বারৈয়ারহাটসহ কয়েকটি স্থানকে ওয়াসার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে ওয়াসার। এসব এলাকায় প্রায় ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। বাকি ৪৫ কোটি লিটার পানি যাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে।