মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন দুই ভারতীয় ঠিকাদার—আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড এবং ইন্টারন্যাশনাল সিপোর্ট ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেড—কাজ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজ (প্যাকেজ-১) সম্পাদনের জন্য গত বছরের ২৭ আগস্ট এই দুই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে 'রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল' জারি করে বাংলাদেশ। কিন্তু দরপত্র দলিল কেনার ছয় মাস পার হওয়ার পর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দুটি দরপত্র দাখিলে অপারগতা জানিয়েছে।
এ কাজের জন্য উপযুক্ত ও আগ্রহী ভারতীয় ঠিকাদার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় সরাসরি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতীয় ঠিকাদারের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে চায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
এ বিষয়ে ভারতের সম্মতি চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হলেও এখনও সায় দেয়নি প্রতিবেশী দেশটি। ফলে ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে বেজা।
গত ২৩ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ওই সভায় প্রকল্পের আওতাভুক্ত ভূমি উন্নয়ন কাজের পুনঃদরপত্রের ক্ষেত্রে ভারতীয় ঠিকাদারের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণের জন্য বেজা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মীরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রায় ৯০০ একর জমিতে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ২০২০ সালের ১১ জুন ভারত সরকার তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট-এর আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে ১১৫ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে।
২০১৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাশ হওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার সময় ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় এর মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
৯১৯.৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি পাশ করে একনেক। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল (জিওবি) ৫.২৬ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৯১৪.৫৯ কোটি টাকা। গত মে মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ৫.৯৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় ৩.৪৩ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ২.৫৫ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৩.৫৯ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জিওবি অংশের বরাদ্দ ৭৩৮.৫৯ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য পুনঃদরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন হলেও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সিম ব্যাংক কর্তৃক প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন ভারতীয় ঠিকাদারের সংক্ষিপ্ত তালিকাকরণের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে অনেক সময় লাগবে।
এছাড়া এ কাজের জন্য উপযুক্ত ও আগ্রহী ভারতীয় ঠিকাদার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের পুনঃদরপত্রের ক্ষেত্রে ভারতীয় ঠিকাদারের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি পাওয়া যায়নি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত পাওয়ার পর পুনঃদরপত্র দেওয়া এবং প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা সমীচীন হবে।
এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান টিবিএসকে বলেন, ভারতীয় ঠিকাদারদের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদাররাও যাতে এই প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য ভারতের সম্মতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা। 'ভারত সম্মতি দিলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করব,' বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বেজার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভারত যদি নতুন ঠিকাদার না দেয় কিংবা বাংলাদেশি ঠিকাদারদের ভূমি উন্নয়নের দরপত্র দাখিল করার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি না দেয়, তাহলে জিটুজি ভিত্তিতে এই ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন থেকে বেজা সরে আসবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জমির চাহিদা অনেক। এই শিল্পনগরে জমির দামও দিন দিন বাড়ছে। ভারতের জন্য আমরা অনন্তকাল অপেক্ষা করব না। ভারত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে বা বাংলাদেশি ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে বাধ্য হয়ে বেজা চুক্তি বাতিল করে ওই জমি ডেভেলপ করে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করবে।'