ডলার কেনাবেচা থেকে অতিরিক্ত মুনাফা: বাকি ৬ ব্যাংককে নিষ্কৃতি দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ডলার কেনাবেচা থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করা আরো ৬ ব্যাংককে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক ৬টির এমডি বরাবর ইস্যু করা এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট এই সিদ্ধান্ত জানায়।
ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ঢাকা ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে মে ও জুন মাসে ডলার কেনাবেচা থেকে করা মুনাফার অর্ধেক কর্পোরেট এন্ড সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ডে নিতে হবে। বাকি অর্ধেক মুনাফা আয় খাতে নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
এর আগে ব্যাংকগুলোর করা এই মুনাফার পুরোটাই আলাদা রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলার কেনাবেচা থেকে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে এই ৬ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জবাবে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি দেয়।
সব মিলিয়ে অভিযুক্ত ১২ ব্যাংককে ডলার কেনাবেচা থেকে অতিরিক্ত মুনাফা ও ভুল তথ্য দেওয়াসহ বেশকিছু অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো হলো বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। তাদেরকেও ডলার কেনাবেচা থেকে করা মুনাফা নিয়ে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তখন এই ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে আগের পদে ফেরার সুযোগও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলার বেচাকেনার মাধ্যমে শীর্ষ ১২টি ব্যাংকের মুনাফার বিশ্লেষণ অনুসারে, ব্যাংক এশিয়া এই বছরের জানুয়ারি-জুন মাসে ৭৭০% বা ১৭৭ কোটি টাকা আয় বৃদ্ধি করেছে, এরপরেই প্রাইম ব্যাংক করেছে ৫০৪% বা ১২৬ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক ৫০০% বা ১০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৪১৭% বা ৭৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৪০৩% বা ১১৭ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৩৫৩% বা ১০৬ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক ৩৪০% বা ১৩৬ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৪৫% বা ১২০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৩৪% বা ৯৭ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ২০৫% বা ১৩৫ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ১৫৯% বা ৪৩ কোটি টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক ১৪০% বা ১৩৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় কিছুটা কমার কারণে ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯৬ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করছে। তবে গত বুধবার ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ১০০.৯৩ টাকা থেকে ১০৭.৪০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে।
এদিকে ডলার মার্কেটে আরও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সকল ব্যাংকের জন্য ডলারের একক রেট নির্ধারণ করে দেয়। রেমিট্যান্স আনতে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১০৭.৫০ টাকা ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকায়। ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি সেটেলমেন্টে ডলারের ওয়েটেড অ্যাভারেজ বায়িং কস্ট- এর সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি যোগ করে বিক্রি করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। চলতি অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। সেদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৩৬.৪৬ বিলিয়ন ডলার।