রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় ফার্নিচার খাত, প্রয়োজন নীতি সহায়তা
প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ফার্নিচার বাজার দেশে, এর ৯৫% পূরণ করছে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার। দেশের মার্কেটের চাহিদা পূরণের পর এখন রপ্তানিতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, কাঁচামাল আমদানিতে সরকারের নীতি সহায়তা পেলে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়বে। আর এ খাত শ্রমঘন হওয়ায় কর্মসংস্থান বাড়ারও সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, 'ফার্নিচার খাতের পসার ঘটছে। বাংলাদেশে এক সময় প্রচুর ফার্নিচার আমদানি হতো। এখন স্থানীয় উদ্যোক্তারা ৯৫% পূরণ করছে।'
'ফার্নিচার শিল্পের জন্য হার্ডওয়ার, লিকার, ফেব্রিক্স সহ অনেক কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডিউটি, ট্যাক্স ও ভ্যাট সব কিছু মিলে ১০০% এর উপরে দিতে হয়। কাঁচামাল আমদানি করে যখন পণ্য রপ্তানি করি তখন আমরা প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ি। আমাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি হয়। বন্ডের ওয়্যারহাউজ সুবিধা পেলে, বাংলাদেশের ফার্নিচারের রপ্তানি আরো বাড়বে।'
সেলিম এইচ রহমান বলেন, '২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ফার্নিচারের বাজারের আকার ৭০০ বিলিয়ন ডলারের। প্রতি বছর এই বাজার বড় হচ্ছে। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে আমাদের সুযোগ আছে এ খাতে রপ্তানি আয় বাড়ানো। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে এখনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তাই দক্ষ জনবল পেতে বেগে পেতে হয়।'
তিনি বলেন, '১৫-২০টি প্রতিষ্ঠান এখন রপ্তানি করছে। গত জুনে ফার্নিচারের বেশ কিছু কাঁচামালের উপর আবার ২০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় যা ফার্নিচার শিল্পের জন্য আরও দুঃসংবাদ।'
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির তথ্য মতে, তাদের তিন হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশে এখন ফার্নিচার মার্কেট প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার।
২০২১-২২ অর্থবছরে ১১০.৩৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফার্নিচার রপ্তানি করা হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৮.৮৭% বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত, নেপাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ফার্নিচার রপ্তানি করে।
ল্যাবরেটরি, স্পা, অফিস, রেস্টুরেন্ট, ক্যাম্পিং সাইট, শোবার ঘর, লাইব্রেরি, পার্ক এবং দোকানে ফার্নিচার ব্যবহৃত হয়।
বেশিরভাগ আসবাবপত্রই বিভিন্ন ধরণের উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং বৈচিত্র্যময় নানান নকশায় পাওয়া যায়।
পারটেক্স স্টার গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শাহ আলম মুন্সী বলেন,, 'ফার্নিচার শিল্পে ব্যবহার করার জন্য ৭০% কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এগুলো আমরা হাই ট্যাক্স দিয়ে নিয়ে আসি। এখন লেবার খরচ, সিপিং খরচ বেড়ে গেছে। সব মিলে আমাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।'
তিনি বলেন, '১০ দিন আগে ভিয়েতনামে একটি কনফারেন্সে গিয়েছি। সেখানের ফার্নিচার উৎপাদন দেখেছি। তাদের এক্সেসরিজ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শক্তিশালী। আমাদের এখানে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কাঁচামাল খরচ কমে গেলে পণ্য উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানিতে সক্ষমতা বাড়বে।'
১৭তম জাতীয় ফার্নিচার মেলার উদ্বোধন
বৃহস্পতিবার দেশীয় ফার্নিচার শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন ১৭তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা শুরু হয়েছে।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে (আইসিসিবি) পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।
আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
সেলিম এইচ রহমান বলেন, 'গত ১৬ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার মেলার ১৭তম আয়োজন। করোনার কারণে দুই বছর পর এবার মেলার আয়োজন। মেলার উদ্দেশ্য হলো দেশীয় ফার্নিচার শিল্পের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও রপ্তানি বাড়ানো।'
মেলায় হাতিল, আক্তার, নাভানা, পারটেক্স, রিগাল, নাদিয়া এবং ব্রাদার্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১৮২টি স্টল অংশ নিয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, 'কাঁচামাল আমদানিতে ডিউটি কমিয়ে দিতে হবে। আর আমাদের পণ্যর ডিজাইন ও ইনোভেশনে গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশের ফার্নিচার মেলায় অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারের সহযোগিতা করতে হবে। এগুলো হলে এ খাতে রপ্তানি বাড়বে।'