অফার থাকলেও ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি ফার্নিচার মেলায়
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া দেশীয় ফার্নিচার শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় ফার্নিচার মেলায় বেড়েছে দর্শনার্থী। মেলার প্রথম দিনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও শুক্রবার দুপুরের পর থেকে তা বাড়তে থাকে।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে চলা ১৭তম জাতীয় ফার্নিচার মেলায় একই ছাদের নিচে হাতিল, আখতার, নাভানা, পারটেক্স, রিগাল, নাদিয়া, ব্রাদার্সসহ ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৮২টি স্টল ঘুরে পছন্দের ফার্নিচার খুঁজে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, এবারের মেলাতে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি বেডরুমের ফার্নিচারের দিকে। এছাড়া সোফা, ডাইনিংয়েও আগ্রহী ক্রেতারা।
শুক্রবার বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির দুটি হলরুমে চলা ফার্নিচার মেলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের মাঝে তাদের পণ্যের বিশেষত্ব ও ডিসকাউন্টের বিষয় তুলে ধরছেন।
মেলাতে সব ফার্নিচার প্রদর্শনের সুযোগ না থাকায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের পছন্দের ফার্নিচার ডিসপ্লেতে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।
মেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মধ্যে ফ্রি হোম ডেলিভারির সুবিধা দিচ্ছে। স্বল্প খরচে ঢাকার বাইরেও তাদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ রেখেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাসার খাট এবং পছন্দের ফার্নিচার কিনতে মেলায় আসা ইসরাত জাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা চাইলেই বাসার কাছের শো-রুমে গিয়ে ফার্নিচার কিনতে পারি কিন্তু মেলায় আসার উদ্দেশ্যই হচ্ছে একই সাথে দেশের এতগুলো ব্র্যান্ডের পণ্য দেখে আমার জন্য কোনটি কমফোর্ট হবে সেটি বাছাই করে নেওয়া। তবে মেলাতে ব্র্যান্ডগুলোর সব ফার্নিচার দেখার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে তারা অনলাইনে দেখাচ্ছে।"
পরিবারসহ মেলায় আসা আকিব খান টিবিএসকে বলেন, "মেলায় আসার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় ঘুরে বাসার শিশু থেকে শুরু করে সবার পছন্দ মতো ফার্নিচার বেছে নিতে পারা। তাছাড়া সবাই ই কোনো না কোনো ছাড় দিচ্ছে পণ্য কিনলে।"
বহু ফার্নিচারের মার্কেটিং হেড শাবাব বিন জাহাঙ্গীর টিবিএসকে বলেন, "মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি প্রথম দিকে কম থাকলেও এখন বাড়ছে। তবে বিক্রি কম হচ্ছে। অনেকেই আসছেন তারা ঘুরে দেখছেন এবং পছন্দ করে যাচ্ছেন। আশা করি মেলার শেষ দুদিন বিক্রি ভালো হবে।"
তিনি বলেন, মেলা থেকে কেউ পন্য অর্ডার করলে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পণ্যের ধরন অনুযায়ী একেবারে কম খরচে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হোম ডেলিভারি দিচ্ছেন তারা। কোনো কোনো ক্রেতাকে আবার ফ্রি ডেলিভারিও দিচ্ছেন।
রিগাল ফার্নিচার মেলাতে ১০% ফ্লাট ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে ইএমআই সুবিধাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
রিগাল ফার্নিচারের ডেপুটি ম্যানেজার মারুফ হাসান টিবিএসকে বলেন, "এবারের মেলাতে ক্রেতাদের বেডরুম সেট ও ডাইনিং সেটের প্রতি আগ্রহ বেশি। দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়লেও বিক্রি কম হচ্ছে।"
হাতিল ফার্নিচারের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন টিবিএসকে বলেন, "গত দুই বছর আগের মেলার থেকে এ বছর ভালো সাড়া পাচ্ছি। ক্রেতারাও খুশি মেলাতে এসে। আমাদের প্রথম দিন অর্ডার কম ছিল কিন্তু ২য় দিনে অর্ডার বেড়েছে।"
হাতিল মেলা উপলক্ষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
ব্রাদার্স ফার্নিচারের এক্সিকিউটিভ মো. শাহিন শেখ টিবিএসকে বলেন, "আমরা ১৫% পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। কেউ বিকাশে পেমেন্ট করলে ১০ হাজার টাকায় ১ হাজার টাকা ক্যাশব্যাক দিচ্ছি।"
এক্সপোজ ফার্নিচারের ফ্যাক্টরি ম্যানেজার কাজী মানিক টিবিএসকে বলেন, "আমরা ১৫% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছি এছাড়া ইএমআই ফ্যাসিলিটি আছে। ঢাকায় সবসময় আমাদের পণ্যের ডেলিভারি ফ্রি।"
আখতার ফার্নিচারের সেলস এক্সিকিউটিভ মো. তারেক আজিজ টিবিএসকে বলেন, "ঢাকার মধ্যে আমাদের ডেলিভারি ফ্রি। মেলাতে ১২% ছাড় রয়েছে। আশা করছি মেলার শেষের দিকে বিক্রি বাড়বে। এখন লোকজন আসছেন, দেখছেন, বিক্রি খুব কম হচ্ছে।"
হাইটেক লাইফস্টাইল অ্যান্ড ফার্নিচারের হেড অব সেলস সামিউল বসির টিবিএসকে বলেন, "এবছর মেলায় রেসপন্স ভালো। ডাইনিং, সোফা, বেড তিনটির প্রতিই আগ্রহ আছে। আমরা ইএমআই সুবিধায় ১২ মাস পর্যন্ত ০% ইন্টারেস্ট দিচ্ছি প্রায় ২০টি ব্যাংকের কার্ডে।"
এদিকে মেলায় অংশ নেওয়া ফোম, ম্যাট্রেস, পিলো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ তাদের প্রডাক্টগুলো ডিসপ্লে করে দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্ঠা করছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য বিক্রি নয়, তাদের পণ্যগুলোর সাথে দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
প্রতিষ্ঠানটির এরিয়া ম্যানেজার তপন কুমার সরকার টিবিএসকে বলেন, "আমরা মেলায় এসে ক্রেতাদের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছি। সারাদেশে ২৫০টির মতো ডিলার রয়েছে আমাদের। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও আমরা পণ্য সরবরাহ করি।"
বৃহস্পতিবার ৫ দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।