ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে
বিদায়ী ২০২২ সাল শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। অনাদায়ী ঋণের সুদ আয়খাতে দেখাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সুবিধা ও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
টিবিএস সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১১টি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে আগের বছরের তুলনায় অধিকাংশ ব্যাংকের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
ব্যাংকাররা বলেন, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করেছে তার থেকে তাদের পরিচালন ব্যয় বাদ যাবে। একইসঙ্গে এই মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের প্রভিশনিং করতে হবে। তারপর দেখা যাবে অধিকাংশ ব্যাংকের নিট মুনাফা খুবই কম।
সম্প্রতি ছাড় দেয়া ঋণের সুদ ব্যাংকগুলোর আয়খাতে দেখানোর সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় ও 'শক এবজর্বিং ক্যাপাসিটি' বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ গত বছর ২,৬৪০ কোটি টাকা রেকর্ড সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে, যা আগের বছর ছিল ২,৪৩০ কোটি টাকা।
সরকারি সোনালী ব্যাংক ২০২২ সালে অপারেটিং মুনাফা করেছে ২,৫২০ কোটি টাকা যদিও ২০২১ সালে তাদের মুনাফা ছিল ২,১০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় তাদের মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক সাহেব টিবিএসকে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তি ছিল। পণ্য আমদানি করতে আমদানিকারকদের ব্যাপক ঋণ বেড়েছে। এছাড়া দেশের ডলার মার্কেট অস্থিতিশীল থাকায় ডলারের দাম প্রায় ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ডলার মার্কেট থেকে বেশ কিছু ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর যদি খেলাপি ঋণ কমে থাকে তাহলে অপারেটিং আয় থেকে প্রভিশনিং করতে হবে না। যদি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে থাকে তাহলে অপারেটিং প্রফিট কমে যাবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালে ছাড় দেওয়া ঋণের আসল আদায় না হলেও এর সুদ আয়খাতে নেয়ার সুযোগ দেওয়ায় তাদের অফারেটিং প্রফিট বেড়েছে। প্রথমে ব্যাংকগুলোর মোট অপারেটিং আয় থেকে অপারেটিং ব্যয় বাদ যাবে। তারপর সেখান থেকে ৩৭ শতাংশ ট্যাক্স বাবদ কাটা যাবে। এর পরে যদিও খেলাপি ঋণ থাকে তাহলে খেলাপি ঋণের তিন ধাপ প্রভিশনিং করতে হয়।
সারা বিশ্ব যেখানে মন্দার আশঙ্কা করছে, সেখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও ৯ মাসে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা বেড়েছে খেলাপী ঋণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট বিতরণ করা ঋণ রয়েছে ১৪.৩৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। জুন শেষে এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।